মাইগ্রেন কি..? মাইগ্রেন বা তীব্র মাথা ব্যাথা নিয়ন্ত্র এর উপায় কি...?
- মাইগ্রেন সাধারনত এক ধরনের তীব্র মাথা ব্যাথাকে বলা হয়। এতে মাথার দুই পাশে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয়।ব্যাথার ধরন হিসেবে ফোঁড়া ফেটে যাওয়ার মতো অনুভূতি বলে অনেকে বর্ননা করে থাকেন।ব্যাথার তীব্রতা এত বেশি হয় যে, ব্যক্তি তার স্বাভাবিক/দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করতে ও পড়েন। এ ব্যথার তীব্রতা সাধারনত হাঁটাচলা, সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় বৃদ্ধি পায়, কারও কারও মাথা ব্যথার সঙ্গে পেট ব্যথা, বমি হওয়া ও মাথা ঘুরার মতো লক্ষন পরিলক্ষিত হয়। মস্তিষ্কের বাইরের দিকে ও মাথার খুলিতে যেসব রক্তনালি রক্ত সরবরাহ করে থাকে সেসব রক্তনালি অজানা কারনে সংকুচিত হয়ে রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং রক্তনালিতে প্রদাহের মাধ্যমে মাথা ব্যাথা সৃষ্টি করে। রক্তে অনেক ধরনের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়েও মাইগ্রেন হয়ে থাকে। যদিও মাইগ্রেনের সঠিক কারন এখন জানা যায়নি, তবে বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক অবস্হার সঙ্গে মাইগ্রেনের সুডম্পর্ক/সংযোগ রয়েছে। মানসিক চাপ হ্রাস - বৃদ্ধির সঙ্গে যেমন :অনেক ধরনের মানসিক চাপের সঙ্গে হঠাৎ মানসিক চাপ কমে গেলেও ব্যক্তিকে মাইগ্রেনে অাক্রন্ত হতে দেখা যায়। অনেক ওষুধ এবং খাদ্যবস্তু গ্রহনের ফলশ্রুতিতে মানুষ মাইগ্রেনে অাক্রান্ত হতে পারে। অত্যধিক গরম,প্রচুর ঘেমে যাওয়া, না খেয়ে থাকা,অাবহাওয়া পরির্বতন,উজ্জ্বল অালো, মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ শব্দ,তীব্র গন্ধ,অত্যধিক পরিশ্রম,মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের অাগের সময় ইত্যাদির সঙ্গে মাইগ্রেনের সংযোগ রয়েছে। অনেক ধরনের মানসিক অসুস্থতায় অাক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাইগ্রেনের প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হয়।সাধারনত উঠতি বয়সের ব্যক্তিদের এবং যুব সমাজের মাঝে মাইগ্রেনের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিলক্ষওত হয়।ব্যক্তিভেদে মাইগ্রেনের ব্যথার ধরন ও তিব্রতা বেশ ভিন্ন হয়ে থাকে।মাইগ্রেনের চিকিৎসার জন্য বেদনানাশক ওষুধ এবং বেশ কিছু স্নায়বিক মেডিসিন, বমি নিরোধক ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব ওষুধ গ্রহনের ফলশ্রুতিতেও পেট ব্যাথা ও বমি দেখাদিতে পারে। যেসব ব্যক্তি ঘন ঘন মাইগ্রেনে অাক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং যাদের মাইগ্রেনের তীব্রতা অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয় তাদের বেলায় মাইগ্রেন প্রতিষেধক মেডিসিন গ্রহনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রতিষেধক মেডিসিন সেবনের ফলে মাথাব্যথার পরিমান, প্রকোপ, স্থায়িত্ব এবং তীব্রতা কম হয়ে থাকে।তবে মানসিক চাপ, চিন্হিত খাদ্যবস্তু ও মেডিসিন এবং উপরে উল্লেখিত মাইগ্রেনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ন। বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে মাথা ব্যথা থেকে উত্তরন পেতে পারেন। মাথা ব্যাথা শুরু হলে শব্দহীন এবং অন্ধকার স্থানে শুয়ে বিশ্রাম গ্রহন করলে ব্যাথার তীব্রতা কমে যায়। কপালে জলপট্টি দিয়ে এবং ঘাড়ের পিছনে ভেজা কাপড় দিয়ে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। চোখ এবং কানের মধ্যবর্তী স্থানে হালকা ম্যাসাজের মাধ্যমেও রোগী অারামবোধ করে থাকে।বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন, মাইগ্রেনের চিকিৎসায় জরুরি বলে বিবেচিত হয়।জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে মাইগ্রেনের অাক্রমনকে প্রতিহত করা যেতে পারে, যেমন:নিয়মিতভাবে কায়িকশ্রম বা ব্যায়াম করা,হাঁটাহাঁটি, সাঁতার ইত্যাদি। যাদের শরীরিক ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তারা ওজন নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে মাইগ্রেন প্রতিহত করতে পারেন।মেডিটেশনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক চাপ হ্রস করেও মাইগ্রেনের অাক্রমন প্রতিহত করা যেতে পারে।
- ডা.এম শমশের অালী, সিনিয়র কনসালটেন্ট(প্রা) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন