সরিষার তেল এবং স্বাস্থ্যকর যতগুনাগুন.....
খাঁটি সরিষার স্বাদ ছাড়া খাঁটি বাঙ্গালী হওয়া জায়না...!
সরিষা দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয় যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। ভর্তা বা গরম ভাতে সরিষার তেল ছাড়াতো বাঙ্গালী অানা অপূর্ন থাকেই...!
সরিষা একবর্ষজীবি উদ্ভিদ। এর উৎপত্তিস্থল এশিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবি শস্য হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়। সরিষার গাছ দৈর্ঘ্যে ১ মিটার মত হয়, তবে রাই সরিষা ২ মিটারও উঁচু হতে পারে
সরিষার তেল ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। খনিজের মধ্যে সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম, জিঙ্ক এবং বেটা ক্যারোটিন থাকে। আর থাকে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে। চুলের বৃদ্ধিতে ভিটামিন “এ” এর ভূমিকা অপরিসীম। অন্যদিকে সরিষার তেল ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফ্যাটি এ্যাসিড সমৃদ্ধ। এর ফ্যাটি এ্যাসিড আপনার চুলকে ন্যাচারাল লুক দিবে। একই সাথে চুলকে চকচকে করে তুলবে। তাই চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার করবেন।
উপমহাদেশে প্রাচীন কাল থেকেই সরিষার তেল দিয়ে খাবার রান্না করার চল ছিল।
সামান্য কটু স্বাদ ও শক্তিশালী সুবাস যুক্ত তেল শরিষার তেল। ঐতিহ্যগতভাবে এই তেল আমাদের পূর্বপুরুষেরা ব্যবহার করে আসছেন। ওমেগা আলফা ৩ ও ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়। এর ঔষধি গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে এই তেল। ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য সরিষার তেলের অসাধারণ উপকারিতার কথা জেনে নিই চলুন।
ইউরোপ আমেরিকায় অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল দিয়ে খাবার রান্না করা হয় বলে আমাদের মধ্যে এই ধারণা জন্মাচ্ছিল যে সেটাই বুঝি বেশি স্বাস্থ্যকর।
পশ্চিমা দেশগুলোতে অলিভ অয়েল এবং ফ্ল্যাক্সসিড তেল রান্নায় বেশি জনপ্রিয়। আর উপমহাদেশে সরিষার পাশাপাশি চীনে বাদামের তেল, নারকেল তেল ছিল জনপ্রিয়। গত কয়েক দশকে সস্তা হওয়ায় সয়াবিন তেল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
কিন্তু একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়ে গেছে যে শরীর এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য সরিষার তেলের কোনো বিকল্প প্রায় হয় না বললেই চলে। আর এ কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মেনে নিয়েছে। প্রতিদিন সরিষার তেলে রান্না করা খাবার খেলে যে উপকার পাওয়া...
🌾ওমেগা ত্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধি
বিশ্ব সংস্থার প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে সরিষার তেল ওমেগা ত্রি এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ। যা জয়েন্ট পেইন এবং ডিপ্রেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
🌾মস্তিষ্কের পাওয়ার বৃদ্ধি পায়
সরিষার তেলে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে মনোযোগ বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে।
🌾শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা খারাপ কোলস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি কোণায় যাতে ঠিকমতো রক্ত পৌঁছে যেতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখে।
🌾হার্টের বন্ধু
এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে ঠিকই। কিন্তু একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত সরিষার তেল খেলে হার্টের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
🌾ডিপ ফ্রাই করার জন্য আদর্শ
আমরা যেহেতু বেশির ভাগ খাবারই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করে থাকি তাই আমাদের জন্য সরিষার তেলের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। আজকাল অনেকেই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এ কথা জেনে রাখা ভালো যে রকমের খাবার আমরা খেয়ে থাকি তা বানাতে অলিভ অয়েল একেবারেই আদর্শ নয়। কারণ কম তাপমাত্রায় বানানো খাবারে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু যেসব খাবার বেশি আঁচে বানানো হয়, তাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে শরীরের ভালো হওয়ার থেকে খারাপ হয় বেশি।
🌾ঠাণ্ডা লাগার হাত থেকে বাঁচায়
আজও আমাদের গুরুজনরা ছোট বাচ্চাদের সরিষার তেল মাখিয়ে থাকেন। কেন এমনটা করে জানেন? কারণ ঠাণ্ডা লাগা এবং সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে শুরু করে একাধিক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে এই তেলটির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।
🌾পেটে ব্যথা এবং মাথা যন্ত্রণা নিমেষে কমায়
সরিষার তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইমফ্লেমেটারি উপাদান যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত মাথা যন্ত্রণা এবং তলপেটের অস্বস্তি কমাতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুণ কাজে আসে।
অন্যান্য গুনাগুণঃ
🌹শরীরের কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের সম্ভবনা হ্রাস করে।
🌹নিদ্রাহীনতা এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক থাকে।
🌹সন্ধিস্থলের ব্যাথা হ্রাস করে থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন