কাজুবাদাম কেন খাবেন...?

কাজুবাদাম যে কোনো খাবারের স্বাদ অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। এই বাদামে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টস রয়েছে।পুষ্টিগুণ এবং শরীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজু বাদামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এতে উপস্থিত প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন নানা ভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। শুধু তাই নয়, কাজু বাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকেরা একে প্রকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন।শরীরকে ফিট ও সুস্থ রাখতে কাজু বাদাম খাওয়ার কোনো বিকল্প হয় না। গবেষণায় জানা গেছে, যারা নিয়মিত বাদাম খান, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। এছাড়াও তাদের মধ্যে ক্যানসার ও হৃদরোগের হার কম থাকে। জেনে নিন কাজুবাদামের নানা উপকারিতা ও ব্যবহার- সুস্থ হৃৎপিণ্ড : কাজুবাদামে ভালো ফ্যাট থাকে এবং এতে কোলেস্টেরল নেই বললেই চলে। দেহের বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এই বাদাম। এতে রয়েছে অলেইক অ্যাসিড, যা হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী। সবল হাড় ও মাংসপেশি : কাজুবাদাম ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ, যা সুগঠিত হাড়, মাংসপেশি ও স্নায়ুর জন্য খুবই দরকারি। মানুষের শরীরে দিনে ৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হয় হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : কাজুবাদামে সোডিয়াম কম থাকে। বেশি থাকে পটাসিয়াম। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সহজেই। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : এই বাদামে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ‘ই’ আছে, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের জারণ প্রতিরোধ করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কাজুতে প্রচুর জিংক থাকে বলে ইনফেকশনের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ সহজ হয়। দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ : কাজুবাদামে উচ্চমাত্রার কপার থাকে। এ কারণে এনজাইমের কাজে, হরমোনের উৎপাদনে এবং মস্তিষ্কের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এ বাদাম। এছাড়া লাল রক্তকণিকা উৎপাদনেও সাহায্য করে এটি। ফলে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে ৩০.১৯ গ্রাম শর্করা, ১৮.২২ গ্রাম আমিষ, ৪৩.৮৫ গ্রাম চর্বি থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরণের কাজু বাদাম পাওয়া যায় যেমন- লবণাক্ত, সিদ্ধ বা মশলাযুক্ত। কাজু বাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে। যেহেতু কাজুতে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে তাই দৈনিক ৫-১০টা কাজু বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। কাজু গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানাকার্ডিয়াম (Anacardium occidentale)। জেনে নিন সেসব গুণাগুণ- ১। কাজু বাদাম ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের শরীরে দৈনিক ৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। আর এটা পূরণ করে এ বাদাম। কাজু মাংসপেশী ও স্নায়ুর সঠিক কাজ ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। ২। কাজু বাদামে কোলেস্টেরল থাকে না, এবং এতে ভালো ফ্যাট আছে। খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে কাজুবাদাম। তাছাড়া কাজুতে অলেইক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারি। ৩। কাজুতে সোডিয়াম কম এবং পটাসিয়াম বেশি থাকে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ৪। কাজু বাদামে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই থাকে। কাজুতে থাকা জিংক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আপানাকে সুস্থ রাখে। কাজু ফ্রি র‌্যাডিকেলের জারণ প্রতিরোধ করে, যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ৫। কাজুতে উচ্চমাত্রার কপার থাকে তাই এনজাইমের কাজে, হরমোনের উৎপাদনে এবং মস্তিস্কের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও লাল রক্ত কণিকার উৎপাদনেও সাহায্য করে। এক কথায় এটা অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করে। কাজুবাদাম খুবই সুস্বাদু। দারুণ স্বাদের এ বাদামের চাষ হয় দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও। কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল। বর্তমানে প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে। খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার খেজুরবাগান, সেনানিবাস, হর্টিকালচার সেন্টার নারানখাইয়া, পানখাইয়া পাড়া, কমলছড়ি ও জামতলী এলাকায় কাজুবাদামের গাছ চোখে পড়ে। এ ছাড়া, রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারেও রয়েছে কাজুবাদামের বাগান। রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ জামিনুল রহমান জানান, ওই সেন্টারে সাতটি কাজুবাদামের গাছ আছে। গাছগুলোর বয়স আট থেকে ১৪ বছর। এ মৌসুমে একটি গাছে ১২ কেজি করে বাদাম পাওয়া গেছে। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাজহারুল করিম জানান, কাজুবাদামের বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale। Anacardiaceae পরিবারের সদস্য এটি। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কাজুবাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষিপণ্যের মধ্যে কাজুবাদামও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে। খাগড়াছড়ি সদরের খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যানতত্ত্ববিদ ওমর ফারুক জানান, প্রক্রিয়াজাতকরণের সঠিক কারিগরি জ্ঞান না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদাম জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, ১৯৯৩ সালে চারটি কাজুবাদামের গাছ রোপণ করা হয়েছে। চার বছর ধরে ফল দিয়ে আসছে। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহব্বত উল্যা বলেন, কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কষ্টসাধ্য এবং বাজারজাতকরণের সমস্যাও রয়েছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কাজুবাদাম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। কাজুবাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত কাজুবাদামকে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়। লবণ-পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজুবাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে ৩০.১৯ গ্রাম শর্করা, ১৮.২২ গ্রাম আমিষ, ৪৩.৮৫ গ্রাম চর্বি থাকে। কাজুবাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানান, পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে। কাজুবাদামের গাছে যে ফল ধরে তাকে কাজু আপেল বলে। কাজু আপেলও সুমিষ্ট ও সুগন্ধযুক্ত। কাজু আপেলের একটি মাত্র বীজ থাকে, যা কাজুবাদাম নামে পরিচিত। ফল পাকলে গাছ থেকে এমনিতেই ঝরে পড়ে গাছের নিচে। সূর্যালোকপ্রিয় কাজুবাদামের গাছ বেশি ছায়া সহ্য করতে পারে না। ভারী বেলে দো-আঁশ মাটি এ গাছের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার

থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি....?