অ্যান্টিবায়োটিক এর জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি বারছে...?


প্রতিদিন খাদ্যগুণ পুষ্টিকর খাবার এর জন্য ব্রয়লার মুরগী,গরু,ছাগল সহ সব ধরনের পশুকেই নিয়মিত ভাবে প্রায় প্রতিদিনই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানো হয়। প্রতি বছর বিশ্বে এই উদ্দেশে প্রায় ৬৩ হাজার ১৫১ টন এরও বেশী অ্যান্টিবায়োটিক লাগে। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে যে খাদ্য গ্রহণ করে পশুরা তা থেকে সহজেই তাদের দেহে মাংসপেশি উৎপাদিত হয়। আগেভাগে প্রয়োগ করা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে সহজে রোগবালাইয়ে আক্রান্ত না হওয়ার কারণেই এমনটা ঘটে। কিন্তু এভাবে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত এই মাংসই বেশিরভাগ খাদ্যবাহিত রোগের সংক্রমণ এবং আমাদের দেহকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী করে তোলার প্রধান কারণ বলে পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এখন আর মানুষের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না এই কারণেই। অথচ বিশ্বের বেশিরভাগ পশু মাংসই উৎপাদিত হয় এখন এই উপায়ে। দেহে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতার অভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর অন্তত ৭/৮ লাখ মানুষ অকালে মারা যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে মারা যায় ২৩ হাজার, ইউরোপে মারা যায় ২৫ হাজার আর ভারতে শুধু ৬৩ হাজার শিশু মারা যায় এই কারণে। এ থেকেই ধারণা পাওয়া যেতে পারে বাংলাদেশের মতো স্বাস্থ্য অসচেতন দেশে কত মানুষ মারা যাচ্ছে এই কারণে...? ওই মৃত্যু ছাড়াও দেহে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণে নানা ধরনের রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ২০ লাখ মানুষ এই কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। বিজ্ঞানিরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার কারণে বিশ্বের ক্ষতি হবে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলালের ও বেশী। এবং অকাল মৃত্যু হবে ১ কোটি মানুষের। নানা রোগের জীবাণুরা অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে তুলেছে। ১৯৪০ সালে আবিষ্কৃত হয় পেনিসিলিন। অথচ মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই এর কার্যকারিতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে তোলে জীবাণুরা। এইসব জীবাণু আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এখন বছরে ৭ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয় এই কারণে। টেট্রাসাইক্লিন এসেছিল ১৯৪৮ সালে কিন্তু ১৯৫০ সালের শেষদিকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধী শক্তি গড়ে তোলে জীবাণুরা। ইরিথ্রোমাইসিন এসেছে ১৯৫২ সালে কিন্তু ১৯৫৫ সালের মধ্যেই এটির কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে। পেনিসিলিনের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে মেথিসিলিন আসে ১৯৬০ সালে। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই স্ট্যাফ ব্যাকটেরিয়া এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। শুধু পেনিসিলিন এবং এর সমগোত্রীয় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধেই নয় বরং সেফালোসপোরিন নামের অ্যান্টিবায়োটিক এবং তার সমগোত্রীয়দের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে জীবাণুরা। এরপর আসে আরো নতুন অ্যান্টিবায়োটিক কিন্তু সেসবও পরাজিত হয়। যতবারই নতুন ওষুধবিদ্যাগত রসায়ন, নতুন আণবিক আকৃতি এবং নতুন কার্যকারিতার পদ্ধতি সম্বলিত অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা হয়েছে ততবারই জীবাণুরা তাদের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার কৌশল রপ্ত করে ফেলছে। এমনকি এখন যেন প্রতিটি দশকে জীবাণুরা আরো দ্রুত গতিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করছে। জীবাণুদের এই নাছোড়বান্দার মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে চিরদিনের মতোই বুঝি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এর কার্যকারিতা হারাবে। যার ফলে এখন সাধারণ কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যাও মৃত্যু ডেকে আনবে হয়তো। সাধারণ কোনো আঁচড়, দাঁত তোলা বা কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ছোট জখম থেকেও প্রাণ হারানোর মতো ঝুঁকি তৈরি হবে হয়তো। এখন যুক্তরাষ্ট্রে যত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয় তার ৮০ শতাংশই ব্যয় হয় পশু মাংস উৎপাদনে। আর বিশ্বব্যাপী যত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয় তার অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হয় ব্রয়লার মুরগীসহ অন্যান্য পশু মাংস উৎপাদনে। এসব অ্যান্টিবায়োটিক কোনো রোগ সারাতে খাওয়ানো হয় না। বরং দ্রুত তাদের মোটা-তাজা করণেই শুধু ব্যবহৃত হয়। অথবা খামারে গাদাগাদি করে বসবাসের কারণে সম্ভাব্য যেসব রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা থেকে রক্ষার জন্য আগাম প্রয়োগ করা হয়। আর ওই মাংস খাওয়ার ফলে মানুষের দেহে আর নতুন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও কাজ করে না। ওই অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত মাংস খাওয়ার ফলে রোগের জীবাণুরা দেহে মিশে যাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠে। নতুন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগেও তাদের আর হত্যা করা যায় না। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে উৎপাদিত মাংস খাওয়ার ফলে মানুষের দেহকোষগুলোর এমন জিনগত পরিবর্তন ঘটে যায়, যার ফলে জীবাণুরা কোষের মধ্যে নতুন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করতে দেয় না বা নতুন অ্যান্টিাবায়োটিক আসলে তাকে বের করে দেয়। অাপনার স্বাস্থ্য সচেতনতা অাপনার জীবনকে বারতি কিছুদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে অনুপ্রাণিত করুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার

থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি....?