মসুর ডাল এর উপকারিতা কি...?
আমিষের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বলা হয়ে থাকে মসুর ডাল গরিবের জন্য গো-মাংস। মসুর ডাল দেখতে হালকা লাল বর্ণের। দানাগুলো খেসাড়ী, কলাই বা বুটের ডাল থেকে ছোট। মসুর ডাল উচ্চ আমিষ
সমৃদ্ধ ; ফলে মানব দেহে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশের অতি জনপ্রিয় মসুর ডাল।মসুর ডাল প্রোটিনের ভান্ডার বলে একে মাংসের বিকল্প হিসেবেও ধরা হয়ে থাকে। গরিবের মাংস বলা হয় মসুর ডালকে আর তাই নিরামিষ ভোজীদের কাছে এটি অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার ।
মসুর ডালের পুষ্টিগুণ।
মসুর ডাল শুধু সুস্বাদুই নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। যেমন, খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও শর্করা ইত্যাদি। মসুর ডাল সহজপাচ্য এবং এতে প্রোটিনের পরিমাণ সর্বাধিক। প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালের পুষ্টিগুণ এমন -জলীয় অংশ ১২.৪ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.১ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩৪৩ কিলোক্যালরি আমিষ ২৫.১ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, লৌহ ৪.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, শর্করা ৫৯.০ গ্রাম।
সৌন্দর্য্য চর্চায় মসুর ডালের হরেক গুন জেনে নেওয়া যাকঃ
ত্বক সতেজ করতে মসুর ডাল
মসুর ডাল পিষে তার মধ্যে মধু এবং দই মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক সতেজ ও উজ্জল হবে ।
মুখের কালচে ভাব দূর করতে মসুর ডালঃ
মসুর ডালকে রাতে দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন। সকাল বেলায় ডালটা পিষে মুখে লাগান। রোজ যদি মুখে এই প্যাকটা লাগান আপনার চেহারায় কালো ভাবটা দূর হয়ে যাবে হবে উজ্জল। তবে মনে রাখবেন, ডালটা রোজ তাজা তাজা পিষতে হবে আর কাঁচা দুধ ব্যবহার করবেন।
মুখে এবং পিঠের দাগ দূর করতে মসুর ডালঃ
যদি মুখে বা পিঠে দাগ হয়, তাহলে মসুর ডালের সাথে পোলাও চাল মিশিয়ে পেস্ট করুন। এর সাথে চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলা লেবুর শুকনো গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ৪ চামচ শশার রসও দিন। মুখে এবং শরীরের নানা স্থানে ঐ পেস্টটা লাগান। শুকিয়ে যাওয়ার পরে ধুয়ে ফেলুন দাগ থাকবে না।
পায়ের পাতা পরিষ্কারে মসুর ডাল ব্যবহারঃ
পায়ের পাতা বা আঙুলের কালচে, হাঁটু, পায়ের গোড়ালির ময়লা ও রুক্ষভাব দূর করতে প্রাচীনকাল থেকে মুসুর ডাল বাটা, হলুদ বাটা, লেবুর রস বা লেবুর খোসার ব্যবহার হয়ে আসছে। মসুর ডাল বাটা, হলুদ বাটা, লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে পায়ের পাতায় লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।
গোপন অঙ্গের দাগ দূর করতে মসুর ডালঃ
গোপন অঙ্গের যেমন- বোগল, রানের দুই পাশের, কোমরের কাল দাগ দূর করতে মসুরের ডালের সাথে কমলা লেবুর শুকনো গুঁড়ো, ৪ চামচ শশার রসও মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন দেখুন কেমন হয়।
বলিরেখা দূর করতে মসুর ডালঃ
বলিরেখা দূর করতে কাঁচা হলুদের সাথে মসুর ডাল বাটা দুধের সর মিশিয়ে মুখে মাখুন ফেস প্যাক হিসাবে। নিয়মিত লাগালে অবশ্যই দারুন উপকার পাবেন।
কনুইর রুক্ষভাব এবং কালো দাগ দূর করতে মসুর ডালঃ
দুধে মসুর ডাল ভিজিয়ে রাখুন,পরে পাটাই বেটে নিন। মসুর ডাল বাটা, হলুদ বাটা, পালংশাক বাটা, টমেটোর রস, সূর্যমুখীর তেল একসঙ্গে মিশিয়ে কনুইয়ে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে মসুরি ডালঃ
রোদেপোড়া দাগ কমাতে মুসুরি ডালবাটা, কাঁচা হলুদবাটা ও মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
ডার্ক সার্কেল সারাতে মসুর ডালঃ
ক্লান্তি, স্ট্রেস, টেনশন, অসুস্থতা সবার আগে ছাপ ফেলে চোখের চারপাশে যা আমরা ডার্ক সার্কেল হিসেবে দেখতে পায়। এর সমাধানে একমুঠো মসুর ডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে ঘণ্টাখানেক। এরপর মিহি করে বেটে নিয়ে। পাতলা সুতি কাপড়ের ভেতর মসুরডাল বাটা দিয়ে পুঁটুলির মতো তৈরি করে নিয়ে। এই পুঁটুলি চোখের ওপর দিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। এটা ডার্ক সার্কেল দূর করতে খুবই উপকার করে।
মেছতা দূর করতে মসুর ডালঃ
মেছতা এক ধরনের চর্মরোগ। ত্বকের রঙের সামঞ্জস্য নষ্ট করে ফেলে এই মেছতা। মেছতার বিশ্রী দাগ একবার ত্বকে দেখা দিলে তা বাড়তেই থাকে। মসুরডাল ভিজিয়ে রেখে বেটে নিতে হবে। এর সাথে অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে। মিশ্রণটি মেছতার ওপর লাগিয়ে রাখতে হবে আধা ঘণ্টা ধরে। এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের দাগ দূর হবে।
ক্ষতের দাগ সারাতে মসুর ডালঃ
ব্রণ, বসন্ত, ফোঁড়া, ঘা বা যেকোনো ধরনের ক্ষতের দাগ দূর করতে সাহায্য করে মসুরডাল। আক্রান্ত স্থান ভালো করে শুকাবার আগেই তা ব্যবহার করলে ভালো ফল দেয়। মসুরডাল বাটা ও কচি ডাবের পানি একসাথে মিশিয়ে দাগের ওপর পুরু প্রলেপ দিতে হবে। শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এরপর ঘষে ঘষে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে যেকোনো ধরনের ক্ষতের দাগ দূর হয়ে যাবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন