মধু কি এর উপকারিতা কি..?
মধুর উপকারিতা সম্পর্কে অামরা সকলেই কম বেশী জানি। কারন অামাদের দেশে মধুর উপকারিতা জানেনা এমন লোক খুবই বিরল। মধু খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। মধুতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান আছে যা আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে কাজ করে। আসুন জেনে নিই মধুতে কোন উপাদান কি পরিমানে আছে- ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশ মাল্টোজ। এর সবগুলোই শর্করা। এ ছাড়া আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, খনিজ লবণ ও এনজাইম।
১০০ গ্রাম মধুতে ২৮৮ ক্যালরি পাওয়া যায়। মধুতে থাকা শর্করা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে এবং শরীরে বাড়তি এনার্জি যোগ করে। মধু মহৌষধ কিন্তু তখনই খুব ভাল কাজ করে যদি তা সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া হয়। মধু খাওয়ার বিভিন্নি নিয়ম আছে আসুন জেনে নিই কিভাবে মধু খেলে বেশী উপকার পাওয়া যায় করা।
আধা গ্লাস হালকা গরম লেবুপানিতে এক চা-চামচ মধু ভোরবেলায় খালি পেটে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এ ছাড়া হজমের সমস্যায়ও মধুর উপকারিতা আছে। এটি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ কমায় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা দূর হয়। মধু সৌন্দর্য বর্ধন বা রুপচর্চায় একটি কার্যকরী উপাদান। মধু শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ও যৌবন শক্তি বৃদ্ধি করে।
মধুতে প্রচুর পরিমানে কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন রয়েছে যা রক্তস্বল্পতায় বেশ কার্যকরী ওষুধ। শরীরের ক্ষত সাড়াতে মধু খুব চমৎকার কাজ করে। এটি জীবাণুনাশক ও ব্যথা প্রশমক। তাই অনেক সময় শল্যচিকিৎসায় মধু ড্রেসিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণ সর্দি-কাশি ও ফ্যারিনজাইটিসে মধু একটি খুবই উপকারী ওষুধ।
দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং মধুমিশ্রিত পানি দিয়ে কুলি করলে মাড়ির প্রদাহ কমে। মধু বিপাকজনিত তাপ উৎপাদন বাড়ায় বলে শীতকালে দেহের উষ্ণতা বাড়ায়।
মধু ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে তাই তাঁরা সরাসরি মধু না খেলেই ভালো হয়। এ ছাড়া ওজন কমানোর বেলায় মধুর কোনো ভূমিকা নেই। নবজাতকের মুখে মধু দেওয়ার যে রীতি চালু আছে, তাও বিপজ্জনক। কারণ নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া কিছু দেওয়া যাবে না। মায়ের বুকের শাল দুধ বাচ্চার জন্য খুবই দরকারী খাবার মধু না তাই মোটেও নবজাতকের মুখে কেউ মধু দিবেন না।
খাটি মধুতে কখনো কটু গন্ধ থাকে না।
মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো বিষাক্ত উপাদান প্রাকৃতিক গাছে থাকলেও তার প্রভাব মধুতে থাকে না।
মধু সংরক্ষণে কোনো পৃজারভেটিভ ব্যবহৃত হয় না। কারণ মধু নিজেই পৃজারভেটিভ গুণাগুণ সম্পন্ন পুষ্টিতে ভরপুর খাদ্য।
মধু উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত, নিষ্কাশন, সংরক্ষণ ও বোতলজাতকরণের সময় অন্য কোনো পদার্থের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয় না।
খাটি মধু পানির গ্লাসে ড্রপ আকারে ছাড়লে তা সরাসরি ড্রপ অবস্থায়ই গ্লাসের নিচে চলে যায়।
খাটি মধুতে যে মান থাকা আবশ্যকঃপানি শতকরা ২১ ভাগের বেশি নয়। সুক্রোজ শতকরা ৫ ভাগের বেশি নয়।
অ্যাশ শতকরা ১ ভাগের বেশি নয়।রিডিউসিং সুগার শতকরা ৬৫ ভাগের কম নয়।খাঁটি মধু চেনার কিছু উপায়ঃবর্তমানে আমরা বাজার থেকে যে মধু কিনে আনি তা যে কতটুকু খাঁটি তা বলা মুশকিল। মধুর মধ্যে সাধারণত ভেজাল হিসেবে পানি, চিনি ও আরও অনেক কিছু মেশানো হয়। চলুন আমরা জেনে খাঁটি মধু চেনার কিছু উপায়,ফ্রিজিং পরীক্ষাঃ মধুকে ফ্র্রিজের মধ্যে রেখে দিন। খাঁটি মধু জমবে না। ভেজাল মধু পুরাপুরি না জমলেও জমাট তলানী পড়বে।পিঁপড়া পরীক্ষাঃ এক টুকরা কাগজের মধ্যে কয়েক ফোঁটা মধু নিন। তারপর যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন। পিঁপড়া যদি মধুর ধারে কাছে না ঘেসে তবে তা খাঁটি মধু। আর পিঁপড়া যদি তা পছন্দ করে তবে মধুতে ভেজাল আছে।চক্ষু পরীক্ষাঃ খুব অল্প পরিমাণ মধু চোখের ভেতরে দিন। যদি মধু খাঁটি হয় তবে প্রথমে চোখ জ্বালাপোড়া করবে ও চোখ থেকে পানি বের হবে এবং খানিক পরে চোখে ঠান্ডা অনুভূতি হবে (এই পরীক্ষায় অনুৎসাহিত করছি)।
দ্রাব্যতা পরীক্ষাঃ এক গ্লাস পানি নিয়ে এর মধ্যে এক টেবিল চামচ পরিমাণ মধু নিন। খুব ধীরে ধীরে গ্লাসটি শেক করুন। যদি মধু পানিতে পুরাপুরি দ্রবীভূত হয়ে যায় তবে তা ভেজাল মধু। আর মধু যদি পানিতে ছোট ছোট পিন্ডের আকারে থাকে তবে তা খাঁটি মধু।মেথিলেটেড স্পিরিট পরীক্ষাঃ সমান অনুপাতে মধু এবং মেথিলেটেড স্পিরিট মিশ্রিত করে নাড়াতে থাকুন। খাঁটি মধু দ্রবীভুত না হয়ে তলনীতে জমা হবে। আর ভেজাল মধু দ্রবীভূত হয়ে মেথিলেটেড স্পিরিটকে মিল্কি করবে।শিখা পরীক্ষাঃ একটি কটন উয়িক নিয়ে উহার এক প্রান্তকে মধুর মধ্যে ডুবিয়ে নেই। তারপর উঠিয়ে হালকা শেক করে নিই। একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে বা লাইটার জ্বলিয়ে তা আগুনের শিখায় ধরি। যদি তা জ্বলতে থাকে তবে মধু খাঁটি আর যদি না জ্বলে তবে মধুতে পানি মেশানো আছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন