
তেতুল গ্রামবাংলার পরিচিত একটি টক স্বাদের ফল ।তেতুল এর সাথে কম বেশি সকলের পরিচিত , ফলে তেতুলের কথা শুনলে মুখে পানি চলে অাসে তাইনা..? অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়।এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন । বরং তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ এ ভরপুর । তেঁতুল দেহে অামাদের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব ভাল উপকারী একটি ফল। তেঁতুল দিয়ে কবিরাজি, আয়ূর্বেদীয়, হোমিও ও এলোপ্যাথিক ওষুধ তৈরি করা হয়।
পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। খাদ্যশক্তির পরিমাণ নারিকেল ও খেজুর ছাড়া সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি থকে তেতুলে। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি আছে তেতুলে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদান স্বাভাবিক পরিমাণে আছে এ তেঁতুল যেসব রোগের জন্য উপকারী তা হলো স্কার্ভি রোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, শরীর জ্বালা করা প্রভৃতি রোগে তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। তেঁতুল রক্তের কোলস্টেরল কমায়। মেদভুঁড়ি কমায়। পেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত খেলে ভালো হয়। তেঁতুল খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে বেশি খেলে রক্তের চাপ কমে যেতে পারে।
উপকারিতা বা পুষ্টিগুণঃ
১। তেঁতুল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের হৃদরোগের ঝুকি কমায়।
২।তেতুল রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে কার্যকর।
৩। শরীরের মেদ কমাতেও কাজ করে তেঁতুল।
৪। পেটে গ্যাস, হজম সমস্যা, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী।
৫। তেতুল খাবার হজমে সহায়তা করে খিদে বাড়ায।
৬। তেতুল গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব দূর করে।
৭। তেতুল মুখের লালা তৈরি করতে সহায়তা করে থাকে।
৮। তেঁতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৯। তেতুল শিশুদের পেটের কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১০। তেঁতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে থাকে।
১১। তেতুল পাইলস্ চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১২।তেতুল মুখে ঘাঁ ও ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে থাকে।
১৩। তেঁতুল রক্ত পরিস্কার করে থাকে।
১৪।তেতুল বাত বা শরিরীক জয়েন্টগুলোতে ব্যথা কমাতে কার্যকর।
১৫।তেতুল ভিটামিন সি-এর বড় উৎস।
১৬। পুরতন তেঁতুল খেলে কঠিন কাশি সারে।
১৭। পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থ অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে অনেক বেশি থাকে।
১৮।তেতুলে খাদ্যশক্তিও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
১৯।তেতুলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুণ বেশি থাকে।
২০। তেতুলে আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি থাকে।

তেতুলে পুষ্টি উপাদানঃ প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেতুলে মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ২৮৩ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগাম ও ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম। পাকা তেঁতুল সবচেয়ে বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। তবে এই পুষ্টিমান তেঁতুলের উৎপাদনের স্থান, জাত ও জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য কিছুটা পরিবর্তন হতেপারে। পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক, খিদে বাড়ায় ও উষ্ণবীর্য হয়। তেঁতুল গাছের ছাল, ফুল, পাতা, বিচি ও ফল সবই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তেঁতুল বীজের শাঁস পুরনো পেটের অসুখে উপকারী। তেঁতুল পাতার রস কৃমিনাশক ও চোখ ওঠা সারায়। মুখে ঘা বা ত হলে পাকা তেঁতুল জলে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়। বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা ও রক্তের প্রকোপে তেঁতুল উপকারী। কাঁচা তেঁতুল বায়ুনাশক। কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাত পাওয়া স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সারে। তেঁতুল গাছের শুকনো বাকলের প্রলেপ, ক্ষতস্থানে লাগালে ত সারে। পুরনো তেঁতুল খেলে আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা ও পেট গরমে উপকার পাওয়া যায়। পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে। তেঁতুলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।সব মিলিয়ে তাই তেতুল খেতে পারেন আপনিও।
অাধুনিকতায় অাজ তেতুল সম্পর্কিত অনেক অযানা তথ্য হাতের মুঠোয়। অামরা জানি তেতুল একটি পুষ্টিগুণে পরিপুরক ফল।অামদের তেতুল এর সম্পর্কিত ভুল ধারনা ভেঙ্গে স্বাস্থ্যকর নানা গুনের এ ফলের ব্যবহারিক জ্ঞান অাহরনে এগিয়ে অাসতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন