করল্লা তিক্ত স্বাদযুক্ত গ্রামবাংলার অতিপরিচিত একটি সবজি।
করল্লায় বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও উপকারী ভিটামিনসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০গ্রাম করল্লায় বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদানেরপরিমাণ কার্বোহাইড্রেট : ৩.৭০ গ্রাম,প্রোটিন : ১ গ্রাম, ফ্যাট : ০.১৭ গ্রাম, খাদ্য আঁশ : ২.৮০ গ্রাম, নায়াসিন :০.৪০০মিলিগ্রাম, প্যান্টোথেনিক এসিড ০.২১২মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ : ৪৭১ আই ইউ, ভিটামিন সি :
৮৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ; ৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম
: ২৯৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম : ১৯ মিলিগ্রাম,কপার : ০.০৩৪ মিলিগ্রাম, আয়রন : ০.৪৩ মিলিগ্রাম,ম্যাগনেসিয়াম : ১৭ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ : ০.০৮৯
মিলিগ্রাম, জিংক : ০.৮০ মিলিগ্রাম।১০০ গ্রাম করল্লা থেকে মাত্র ১৭ ক্যালরি পাওয়া
যায় এবং এতে পানির পরিমাণ ৮০-৮৫%।
এই উভয় কারণেই করলা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে
বিশেষভাবে সাহায্য করে।
করল্লায় বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের দেহ থেকে
অপ্রয়োজনীয় পদার্থ নিষ্কাশনে সাহায্য করে, যা আমাদের পরিপাক ও বিপাককে সহজ করে। ফলে আমাদের ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।
করল্লায় ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও যে কোনো ইনফেক্শন থেকে রক্ষা দেয়। যে কোনো ইনফেক্শন থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন করল্লার পাতা বা করল্লাকে পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি খেলে উপকার পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতীয় ও চৈনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে করল্লা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই শাস্ত্রে প্রাচীনকাল থেকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে করল্লার ব্যবহার লক্ষণীয়। রক্তে অপর্যাপ্ত ইনসুলিন নিঃসরিত হলে অথবা ইনসুলিনের কাজ কোনো কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে আমাদের কোষে চিনির শোষণে ব্যাঘাত ঘটে ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখাদেয়। করল্লার বিশেষ তিনটি উপাদান, charantin, vicine, polypeptide-p রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই তিনটি উপাদান এককভাবে বা একত্রে রক্তে চিনির মাত্রা হ্রাস করে।
এ ছাড়া করল্লার lectin নামক বিশেষ উপাদান আমাদের প্রান্তীয় কলার ওপর কাজ করে
আমাদের ক্ষুধাকে প্রশমিত করে ঠিক যেভাবে ইনসুলিন আমাদের মস্তিষ্কে কাজ করে।
বার্ধক্য, ক্যানসার ও অন্যান্য আরো অনেক রোগের মূল কারণ হলো আমাদের দেহের মুক্ত মৌলসমূহ।করল্লার ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও
ফ্ল্যাভোনয়েড্স এসব মুক্ত মৌলের বিরুদ্ধে কাজ
করে।করল্লার আঁশ খাদ্যের পরিপাককে সহজ করে। তাই
কোষ্ঠকাঠিন্যে এটি উপকারী।
করল্লা খেতে তেতো হলেও এর রয়েছে অনেক গুনাবলি। তাই এটি স্বাস্থের জন্যে অনেক উপকারি ও গুরুত্বপূর্ণ। চলুন আমরা জেনে নেই করল্লা আমাদের স্বাস্থের জন্য কি কি উপকার সাধন করে থাকে:
💊 করল্লা ডায়বেটিস রোগীর জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন নিয়মিত এক কাপ করল্লার রস পান করলে সুগার অনেকটা কমে আসে এবং শরীরে অনেক পরিমানে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায়। যা আপনাকে ডায়বেটিস রোগ হওয়ার থেকে বা ডায়বেটিস থাকলে তা বৃদ্ধি পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।
💊 প্রচুর পরিমানে আয়রণ রয়েছে। আয়রণ হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
💊 করল্লা ফাইবার সমৃদ্ধ ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমায়।
💊করল্লায় রয়েছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড, জিঙ্ক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম। অসুখ নিরাময়ে সাহায্য করে।
💊নানা রকমের ব্লাড ডিজঅর্ডার যেমন স্ক্যাবিজ, রিং ওয়র্ম এর সমস্যায় করল্লা উপকারী। ব্লাড পিউরিফিকেশনে সাহায্য করে।
💊 স্কিন ডিজিজ ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
💊 করল্লায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে বিটা ক্যারোটিন আছে। এমনকি ব্রকলি থেকেও দ্বিগুণ পরিমানে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে এতে। দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখতে ও চোখের সমস্যা সমাধানে বিটা ক্যারোটিন উপকারী।
💊 করল্লায় যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের জন্য একান্ত জরুরী। ভিটামিন সি আমাদের দেহে প্রোটিন ও আয়রন যোগায় এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তোলে।
গ্রাম কিংবা শহর সকলের কাছে প্রাচিন কাল থেকে বর্তমান অাধুনিক সমাজেও
করল্লা বাংলার অতি পরিচিত প্রয়জনিয় স্বাস্থকর একটি খাদ্য তালিকার সবজি হিসেবে পরিচিত । তাই স্বাস্থ্যকর সবজি বলতে করল্লা ই সবথেকে একটি জনপ্রিয় সবজি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন