ত্রিফলা কি..? ত্রিফলা এর উপকারিতা কি...?
ত্রিফলা অর্থাৎ তিনটি ফল আমলকী, বহেড়া ও হরীতকী যদি ঠিকমতো মাত্রায় নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে তা অমৃত তুল্য কাজ দেয়।
প্রসঙ্গত: আমার ব্যাক্তিগত ধারণা , স্বাদ, গুন, উপকারিতা ইত্যাদির কথা ভেবেই এই অমৃত বস্তুটির কল্পনা করা হয়েছিল। সেই অমৃত যে পান করত সেই অমর হতে পারত। পৃথিবীতে অমর কেউই হতে পারেন না। জন্ম-মৃত্যু একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা।
আসলে এখানে "অমর" শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে "দীর্ঘ জীবন অর্থে"।
যাক, যেকথা বলছিলাম, এই ত্রিফলা হলো মানুষের রোগের মূল কারক বায়-পিত্ত-কফ ত্রিদোষ নাশক।
প্রস্তুতকরণঃ পরিষ্কার ও পোকা রহিত হলুদ হরীতকী, বহেড়া ও আমলকী নিয়ে তাদের বীজ বের করে ফেলবেন। তারপর ওগুলো কুটে বা বেটে নিয়ে কাপড়ে চেলে নিন। প্রতিটি আলাদা-আলাদা চূর্ণ করে তুলে রাখুন। অথবা মাত্রা মতো মিশিয়ে রাখুন। হরীতকী যদি ১০ গ্রাম হয় তাহলে বহেড়া হবে ২০ গ্রাম এবং আমলকী হবে (চুর্ণ) ৪০ গ্রাম। এই মিশ্রন করে সাবধানে রাখবেন যাতে বর্ষার জলীয় হাওয়া তাতে না লাগে।
এই চুর্ণ বাজারেও পাওয়া যায় তবে বাজার থেকে চূর্ণ না কিনে ঘরে চূর্ণ তৈরি করে নেবেন। এই চূর্ণ মাত্রা মতো মিশিয়ে একটা কাচের বোতলে রাখলে মোটামুটি ৩-৪ মাস ভালো থাকে। আর যদি প্রক্রিয়া যাত করতে পারেন তাহলে আরো বেশীদিন ভালো থাকবে। সুতরাং তার মধ্যে শেষ করে আবার নতুন চূর্ণ করবেন।
সেবনবিধি: সকালে মুখ হাত ধুয়ে জল দিয়ে কুলি করে নিয়ে খালি পেটে ত্রিফলা চূর্ণ মুলে দিয়ে পানি খাবেন। প্রতিদিন এক মাত্রা।
মাত্রা: ছোট থেকে বড় বয়স যাই হোক, রোগীর যত বয়স তত রতি খেতে হবে। ১ রতি সমান ২ গ্রন। অর্থাৎ রোগীর বয়স যদি ৪০ হয় তাহলে তাকে ৪০ রতি বা ৮০ গ্রেন অর্থাৎ ৫ গ্রাম পরিমান চূর্ণ সেবনীয়।
ত্রিফলা চূর্ণ সেবনের ১ ঘন্টা সময়কাল পর্যন্ত দুধ, চা বা অন্য কিছু খাওয়া যাবে না। কখনো-কখনো ত্রিফলা চূর্ণ সেবনে রোজ ২-১ বার পাতল পায়খানা হতে পারে। এতে ব্যস্ত হওয়ার বা চিন্তা করার কারণ নেই।
প্রচলিত ফলের মধ্যে আমলকীতে ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি।
আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica officinalis। উপমহাদেশে আমলকীর বেনারসি জাতটি সবচেয়ে ভালো। ফল পাকে শীতকালে। ফলের প্রতি ১০০ গ্রামে ৮১ গ্রাম পানি, ০.৫ গ্রাম আমিষ, ১৪ গ্রাম শ্বেতসার, ০.১ গ্রাম স্নেহ, ০.৭ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৩.৫ গ্রাম আঁশ, ০.০৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.০২ গ্রাম ফসফরাস, ১.৫ গ্রাম আয়রন, ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি এবং ১৪০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে। প্রতি ১০০ গ্রামে ৫৯ কিলোক্যালরি তাপশক্তি বিদ্যমান।আমলকী প্রক্রিয়াজাত করলে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ কমে যায়, তবে আমলকীর অ্যাসকরবিক এসিড স্থায়ী। কেননা, এটা ট্যানিন ও অ্যান্থোসায়ানিন দিয়ে আবৃত থাকায় সহজে অক্সিডেশন হয় না। নিষ্কাশিত ফলের রসের ভিটামিন এক সপ্তাহ পর্যন্ত অবিকৃত থাকে। একটু সচেতন হলে প্রতিটি বাড়িতে একটি আমলকীগাছ রোপণ করলে ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস আমরা রেখে যেতে পারি। কাঁচা আমলকী খাওয়া হয়। আমলকীর জেলি, মোরব্বা বেশ সুস্বাদু। ফল ফালি করে কেটে রোদে শুকিয়ে লবণ, জোয়ান ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে মুখশুদ্ধি হিসেবে ব্যবহার হয়। আমলকীর ভেষজ গুণ অনেক। আমলকীর রস যকৃত, পেটের পীড়া, অজীর্ণ, হজমি ও কাশিতে বিশেষ উপকারী। প্রচলিত আছে, প্রতি সকালে এক কাপ পরিমাণ হরীতকী ভেজানো পানি ব্যবহার করলে রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। আমলকী ও বিভীতকীর (বহেড়া) সঙ্গে হরীতকী ভেজানো পানি, সব রোগের আশ্চর্য মহৌষধ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন