কাঁঠাল এর স্বাস্থ্যকর উপকার বা গুনাগুন কি.....?
কাঁঠাল গ্রাম বাংলার একটিপরিচত জনপ্রিয় জাতীয় ফল।কাঁঠাল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ অতি উত্তম ফল। কাঁঠালে
রয়েছে ৩৩% খাদ্য ও ৬৭% গোখাদ্য। কোয়ার ওজন ৪৫-১০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। একটি কোয়ার ৭৫ ভাগ খাবার উপযোগী ও ২৫ ভাগ বীজ। মরটনন ১৯৮৯ সালে ও সোয়েপদজো ১৯৯১ সালে কাঁঠালের ঔষধি গুণ বর্ণনা করেন। কাঁঠালের ফল, বীজ, শিকর, পাতা ও আঠা অপরিসীম ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ। কাঁঠালের বিভিন্ন অংশের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বর্ণনা করা হল।
ফল হিসাবে কাঁঠালকে চীনে পুষ্টিকর টনিক হিসেবে গণ্য করা হয়। মাদক সমস্যা হতে পরিত্রানের জন্য এ টনিক ব্যবহৃত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৯৫ প্রকার ক্যালরি আছে। ফল হজমকারক ও ল্যাক্সাটিভ সমৃদ্ধ। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, বি কমপ্লেক্স ও সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও লৌহ। এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ও উপকারিতার জন্য কাঁঠাল দেহের সেলের জন্য খুব উপকারী। কাঁচা ফল আদর্শ সবজি। রান্নার আগে কাঁচা ফল কেটে গরম পানিতে ৫-৭ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে আঠা দূর হয়। পহেলা বৈশাখে কচি ফলের সবজি গ্রামেগঞ্জে প্রচলিত খাবার। বৌদ্ধ পূর্ণিমায় কাঁচা কাঁঠালের সবজি জনপ্রিয় খাবার। আলু ও ডালের সাথে কাঁচা ফলের সবজি অতি উত্তম তরকারি। পাকা ফল দুধসহ মুড়ি, চিড়া, ভাত ও রুটির সাথে খাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে পান্তাভাত দিয়ে কাঁঠাল খাওয়ার প্রচলন আবহমান কাল ধরে প্রচলিত। দুধসহ ফল সিদ্ধ করে ছেকে নিলে মজাদার খাবার তৈরি হয়।
পাতাঃকাঁঠালের পোড়া পাতার ছাইয়ের সাথে ভুট্টা ও নারিকেলের খোসা একত্রে পুড়িয়ে নারিকেল তেলের সাথে মিশাতে হবে। এ মিশ্রণ ঘা বা ক্ষতস্থানে লাগালে শুকিয়ে যায়, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার ভাল হয়। পাতা গবাদি পশুর উত্তম খাবার ও কোরবানির পশুর জন্য আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচিত।
আঠাঃকাঁঠালের আঠা ও ভিনেগারের মিশ্রণ গলাফোলা ও সাপের কাঁমড়ের ক্ষত সারায়।
শিকড়ঃশিকরের নির্যাস দিয়ে জ্বর, কলেরা, চর্মরোগ ও হাঁপানির ওষুধ প্রস্তুত হয়।
বীজঃবীজে জ্যাকলিন নামক এক প্রকার প্রোটিন আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বীজ গরম করে ক্ষতস্থানে লাগালে উপকার হয়। বীজ এফরোডিয়াসিক রোগে কার্যকর। কাঁঠালের শাঁস ও বীজ চীনে বলবর্ধক হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়া বীজে আছে ক্যালরি, শর্করা, ও আমিষ। কোষ ও বীজ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ সমৃদ্ধ। বীজে প্রচুর শর্করা থাকলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উত্তম পথ্য। শুকনা বীজ তরকারি, সবজি ও ভর্তা খুব মজাদার খাবার। বীজ ভাজা মুড়িসহ গুড় দিয়ে খাওয়ার প্রচলন আছে। শুকনা বীজের ময়দার তৈরি রুটি খুব মজাদার। বীজ শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে সবজি খাওয়া সম্ভব।
পুষ্টির অভাব পূরণঃপুষ্টির অভাবা মেটাতে কাঁঠাল বিশেষ কার্যকর। দেশের অনেক নারী ও শিশু ফি বছর ভিটামিন ও খনিজের অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন জনপ্রতি ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। এ হিসেবে দেশের লোকসংখ্যা হিসেবে বছরে ৮০ লক্ষ টন ফল দরকার। অথচ ফলের উৎপাদন ১৫ লক্ষ টন যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কাঁঠাল অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
পুষ্টিকর গোখাদ্যঃএছাড়া কচি পাতা, কচি ডাল, ছোবড়া, মোচা, ভুতি ইত্যাদি উৎকৃষ্ট গোখাদ্য। বিশেষ করে দুধেল গাভীকে এসব নিয়মিত খাওয়ালে গাভীর পুষ্টির পাশাপাশি দুধ বাড়ে।
পোকার আক্রমণ হতে সবজির সুরক্ষাঃফলের ভেতরের গোলাকার মোচা কুমড়া ও লাউয়ের মাচায় ব্যবহার করলে ফল ছিদ্রকারী মথ জাতীয় পোকার আক্রমন হতে এসব সবজি রক্ষা পায়।
অর্থকরী সম্ভাবনা ও প্রক্রিয়াজাতঃকাঁঠাল গাছের রযেছে নানামুখী অর্থকরী সম্ভাবনা। বিশ্বের সবচেয়ে উযন্নতমানের ও সেরা কাঁঠাল হয় এদেশে। এর ফল, বীজ, কোয়া, ফলের বহিরাংশ, কাঠ, পাতা সবই কাজে লাগে। কাঁঠাল গাছের বিশেষত্ব হল কোন অংশই ফেলনা নয়, বরং নানাভাবে উপকারী।
কাঠের ব্যবহারঃহলুদ রঙের জন্য কাঁঠাল কাঠ আসবাবপত্র, ঘরের দরজা, জানালা তৈরির জন্য খুব সমাদৃত। এর আসবাবপত্র খুব দামি ও টেকসই। আসবাবপত্র তৈরিকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গাছের ডালপালা ও পাতা উত্তম জ্বালানী।
কাঁঠাল জাতীয় ফল হিসেবে
পরিচিত একে ফলের রাজা বলা হয়,অামাদের উচিৎ কাঠঁল চাষ, শ্লিপঅন,ঔষধ, প্রসাদন সামগ্রিকতে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং গবেষণা করা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন