টমেটোর উপকারী জত গুন
টমেটো আমাদের দেশের একটি প্রধান শীতকালীন সবজি, তবে গ্রীষ্মকালেও টমেটো সাফল্যের সাথে চাষ করা যায় এবং পাওয়া যায়। সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা সারাদেশে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য এটি একটি বিশেষ অর্থকরী সবজি হিসেবে চলে আসছে।
সবজি হিসাবে এর ব্যবহার ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও এর ব্যবহার সুপরিচিত। দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে টমেটো রপ্তানিরও প্রচুর অর্থ উপার্জন করে আসছে। রান্নার উপকরণ হিসেবে এবং খাবারের সাথে টমেটো সসও বেশ পরিচিত হয়ে আসছে।
সর্বত্রই এটি জনপ্রিয় কারন এর আকর্ষণীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার ফলে। এ জনপ্রিয় সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। আর এই টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ৭-১০ কাপ টমেটো খেলে অনেকটা হৃদরোগ প্রতিরোধ করা যায়। আর যদি পরিমিত তেল দিয়ে রান্না করে টমেটো খাওয়া হয় তাহলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। থ্রম্বোসিসের পরিমাণও কমায় এই টমেটো। চলুন জেনে নেই টমেটোর গুনাগুন সম্পর্কে।
পুষ্টিতে ভরপুর টমেটো
মাত্র এক কাপ তরতাজা পাকা টমেটোতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলেট এবং পটাসিয়াম। টমেটার মাঝে কম পরিমাণে থাকে সোডিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং ক্যালোরি। টমেটা থেকে আরও পাওয়া যায় থায়ামিন, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং কপার।
এছাড়াও এই এক কাপের টমেটার মাঝেই থাকে দুই গ্রামের মত ফাইবার। অনেকটা পানিও রয়েছে এর মধ্যে। এই সবকিছু মিলিয়ে শরীরের পুষ্টি চাহিদার পূরণের ক্ষেত্রে টমেটার গুনাগুন অসাধারন।
চর্মরোগ নিরাময়ে টমেটো
চর্মরোগের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকারি উপাদান। আপনার ত্বকে যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তবে টমেটোর ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি উপকার পাবেন। চর্মরোগ নিরাময়ে টমেটোর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। একটি টাটকা টমেটো নিয়ে তার রস করে। তারপর সে রস ত্বকের যে স্থানটি রোগাক্রান্ত সেখানে মাখিয়ে রাখুন। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার মাখিয়ে রাখলে। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং বয়সের ছাপ দুর করতে
টাটকা টমেটো কেটে টুকরো টুকরো করার পর সেগুলো থেকে রস করে নেন। তারপর এই রসের সাথে খানিকটা চিনি মেশান। এই চিনিমিশ্রিত রস প্রতিদিন মুখে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এতে মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল হবে। বয়স বাড়তে থাকলে মানুষের মুখে যে বয়সের ছাপ পড়ে, এই টমেটো দেওয়ার ফলে সেই ছাপ লুকিয়ে যেতেও টমেটা সাহায্য করবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যে কোন রোগীর জন্য অনেক কঠিন একটা সমস্যা। তাই এখন থেকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি বা দুটি টমেটো খাবেন। সাথে কিছু চিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।
৫। রক্ত স্বল্পতা দূরীকরণে
যারা রক্ত স্বল্পতা বা এনিমিয়ায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো বেশ উপকারী একটি সবজি বা ফল। একটি আপেল, একটি টমেটো এবং ১৫ গ্রাম তিল একসাথে খাবেন। প্রতিদিন এক বা দুইবার খেতে পারেন। এতে রক্ত স্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হতে পারে।
ক্ষত রোগ নিরাময়ে
আমাদের অনেকের মুখগহ্বরে মাঝে মাঝে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা অনেকের হয়ে থাকে। আমি মনে করি এখন থেকে আর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। টমেটো রস আমাদের সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে টমেটোর রস খান। দেখবেন, দিন কয়েকের মধ্যে মাথার ক্ষত দূর হয়ে যাবে।
হেপাটাইটিসের নিরাময়ে
টমেটোর এই গুণের কথা বলার মাঝে আমি আপনাদের একটি মজাদার খাবার রান্না শিখিয়ে দেব। এ খাবারের নাম ‘সবজি চাল স্যুপ’। এমন নাম শুনছেন, এই ডিশের প্রধান উপাদান হচ্ছে, টমেটো, সেলারি, গাজর এবং চাল। এ ছাড়া, পরিমাণমতো লবণ দিতে পারেন। এই ডিশ হেপাটাইটিসের নিরাময়ে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
সর্দি-কাশি প্রতিরোধে
সর্দি-কাশি গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে সর্দি-কাশি লাগাটা স্বাভাবিক। টমেটো আপনাকে এ থেকে রক্ষা করতে পারে। এক বা দুটি টমেটো নিয়ে স্লাইস করে অল্প চিনি বা অল্প লবণ দিয়ে পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করুন। তারপর গরম গরম খেয়ে নিন। সর্দি-কাশিতে উপকার পাবেন।
জ্বরের নিরাময়ে সহায়ক
গায়ের তাপমাত্রা নানান কারণে বাড়তে পারে। কিন্তু কারণ যা-ই হোক, তাপমাত্রা বাড়লেই আমরা বলি ‘জ্বর হয়েছে’। শরীরে ইনফেকশন হলে গায়ের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তখন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। কিন্তু সামান্য জ্বর হলে অনেক সময় স্রেফ টমেটো খেলেই আরাম পেতে পারেন। এক্ষেত্রে টমেটোর রসের সাথে তরমুজের রস মিশিয়ে খাবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন