মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন...
ব্যক্তিগত ও সামাজিক হুমকি, চাকরি-বাকরি, ব্যস্ততা, অসুখ-বিসুখ সবকিছু মিলিয়ে এই মানসিক চাপ আমাদের স্বাস্থ্য ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ফলশ্রুতিতে, জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। ছোটো-খাটো বিষয়ে হতাশা এসে একসময় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে জীবনের পরতে পরতে ! ছোট্ট এই জীবনটাকে উপভোগ করার আগেই বিষাদে ছেয়ে যায় মন।
কিন্তু এভাবে কি চলতে দেয়া যায় ? তাহলে কী করা উচিত্ ? আসুন জেনে নিই মানসিক চাপকে মোকাবিলা করার কিছু সহজ কিন্তু ফলপ্রসূ পদ্ধতি -
' না ' বলতে শিখুন :-
কাজের চাপ এবং সমাজ ও পরিবারকে দেয়া অঙ্গীকার যখন বেশি হয়ে যায়, তখন 'না' বলাটা শিখুন।
অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে যেয়ে সেধে চাপ নিতে যাবেন না। প্রয়োজনে সাহায্যও চেয়ে নিতে পারেন, এটিও টিম ওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিরতি নিন :-
ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশানের মতে, "আপনি আপনার কাজে খুব ভালো দক্ষতা দেখাতে পারেন, যদি কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্তত ১০/১৫ মিনিটের বিরতি নেয়ার চর্চাটা করতে পারেন"। কাজেই ডেস্কে বসে লাঞ্চ না করে এই সময়টাতে মাথা থেকে দুশ্চিন্তা সব ঝেড়ে ফেলে নিজেকে একটু রিচার্জ করে আসুন। ফলাফল আপনার পরবর্তী পদক্ষেপগুলোই !
ব্যায়াম করুন :-
মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলার একটি দুর্দান্ত উপায় হচ্ছে দৈহিক কার্যকলাপ। শারীরিক পরিশ্রম আমাদের শরীরে এন্ডোর্ফিনের নিঃসরণ ঘটায়, যা আমাদের মনে ভাল লাগার অনুভূতি তৈরী করে। একই সাথে তা আবার এনার্জি বাড়ায় এবং স্ট্রেস হরমোন যেমন কর্টিসোলকেও প্রতিহত করে। আপনার দেহের উপযোগী যেকোনো একটি ব্যায়াম নির্বাচন করে নিন, হতে পারে সেটি হাঁটা কিংবা নাচ কিংবা জিমের ব্যায়াম !
সুইচ অফ করতে শিখুন :-
আজকের জন্য অফিস ছুটি বা কাজ শেষ? তবে মোবাইলের সুইচ অফ করার মতো করে আপনার মনের সুইচটিকেও অফ করে দিন। অযথা কাজের চিন্তায় মনটাকে ভার করে রাখবেন না।
গভীর নিঃশ্বাস নিন :-
মানসিক চাপে থাকলে আমরা সাধারণত অগভীর শ্বাস নিই, যা মূলত দুশ্চিন্তা বাড়ায়। উদ্বেগ দূর করার জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের কিছু নিয়ম আছে -
আপনার মধ্যচ্ছদা (ডায়াফ্রাম) পর্যন্ত গভীর একটি নিঃশ্বাস নিন, যাতে আপনার পাঁজর বিস্তৃত হচ্ছে বলে বোধ হয়।
একবার যখন নিঃশ্বাস পূর্ণ বলে মনে হবে, তখন আরও তিনবার শ্বাস নিন ও ধরে রাখুন।
এইবার পুরো নিঃশ্বাস ছেড়ে দিন এবং ছোটো ছোটো আরও বার তিনেক নিঃশ্বাস ছাড়ার চেষ্টা করুন।
তিন-চারবার পুনরাবৃত্তি করুন।
ক্যাফেইন সমাচার :-
কফি, চা, কোলা ও সমস্ত অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস রক্তে অ্যাড্রেনালিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যেটি আসলে স্ট্রেসের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়। পান করতে হলে সবুজ চা পান করুন। সবুজ চায়ে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা স্ট্রেসের কারণে শরীরে সৃষ্ট অক্সিডেটিভকে প্রতিহত করে।
ইতিবাচক হোন :-
অধিকাংশ মানসিক চাপই আসলে আপনার অনুধাবনের উপর নির্ভর করে। একটু পেছনে ফিরে তাকান এবং ভাবুন, সত্যিই যা নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন, তা নিয়ে খুব চিন্তা করার দরকার আছে কি? শুধুমাত্র আপনার দৃষ্টিভঙ্গির একটু পরিবর্তনই আপনাকে যেকোনো সমস্যাকে একটি ইতিবাচক কোণ থেকে দেখতে সাহায্য করবে।
পরিকল্পনাই সব :-
সময় ব্যবস্থাপনায় কৌশলী হোন। একদিনের কাজ শেষে পরের দিন 'কী করতে হবে' তার একটি তালিকা তৈরি করে রাখুন। তালিকাবদ্ধ কাজগুলো একটি একটি করে শেষ হওয়ার পর তা আপনাকে স্বস্তির আবেশ দেবে।
নিশ্চিন্তে ঘুমোন রাতের বেলায় :-
রাতে ঘুম আসেনা? মানসিক চাপের একটি অন্যতম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হল ইন্সোমনিয়া, মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং শরীরকে ক্লান্ত ও মেজাজকে খিটখিটে করে তোলে। টেলিভিশান বন্ধ করে দিন, উষ্ণ গরম পানিতে স্নান করে নিন। বই পড়ুন অথবা শোবার আগে গান শুনতে পারেন। আপনার বেডসাইড টেবিলে একটি নোটবই রাখুন, সেখানে মাথায় ভিড় করে থাকা সমস্ত কথা লিখে রাখুন। তাহলে সেগুলো আপনার মনে জমে থেকে আর স্ট্রেস বাড়াতে পারবেনা ।
নিজের মুক্তির পথ খুঁজে নিন :-
রবার্ট এম. সাপোলস্কির মতে, আপনার নিত্য যেসব বিষণ্ণতা, সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত একটি মুক্তির পথ খুঁজে নিন, মানসিক চাপ দূর করার ক্ষেত্রে তা অনেক কাজে দেবে। হতে পারে তা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান, গান, নাচ, কিংবা ধ্যান, প্রার্থনা কিংবা কোন শখের কাজ ! এটি আপনাকে মানসিক শক্তি দেবে এবং উপভোগ্য করে তুলবে আপনার এক একটি বিষাদময় দিন।
ম্যাসেজ করুন :-
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের একটি ভাল উপায় হল মালিশ করা। এটি আপনার খিল ধরে থাকা পেশিকে শিথিল করে, ব্যাথা কমায় ও রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়। আখেরে যা মানসিক অবসাদ দূর করায় ভূমিকা রাখে ।
মেডিটেশন করুন :-
দিনে অন্তত ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের জন্যে হলেও মেডিটেশন করুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন