অর্জুনের রয়েছে ভেষজ ঔষধের অনেক গুন....
অর্জুন গাছের সম্পর্কে অামরা সবাই কমবেশি জানি পরিণত বয়সে একটি গাছ ১০-১৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। গোড়ায় অধিমূল আছে। গাছের কাণ্ড একধিক ভাঁজ বা স্তর যুক্ত। বাকল পাতলা স্তরে বিভক্ত। পাতা লম্বাটে ৭.৫ - মে সে. মি. ফুল হলুদাভ ও স্পাইক সোজা এবং ফুলের পাপড়ি নাই।অর্জুনের ফল লম্বাটে ৫টি ভাজ ও পাখায় বিভক্ত থাকে।
অর্জনের উপকারিতাঃ
হৃদরোগে অর্জুনঃ-অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগে। অর্জুনছালের রস কো-এনজাইম কিউ-১০ সমৃদ্ধ। এইকো-এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ এবং হার্টঅ্যাটাক প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাডপ্রেসার এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়।অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃদপিন্ডেরপেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতাবাড়ে। বাকলের ঘন রস দুধের সাথে মিশিয়েপ্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।বাকলে রস না থাকলে শুকনো বাকলের গুঁড়া১-২ গ্রাম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে খালিপেটে খেতে হবে। রক্ত নিম্নচাপ ও রক্তক্ষরন কমাতেঃ- রক্তে নিম্ন চাপ থাকরে অর্জুনের ছালের রস সেবনে উপকার হয়। রক্তক্ষরণে ৫-৬গ্রাম ছাল রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেকে জল খেলে আরোগ্য হয়।
ক্ষয়কাশেঃ- অর্জুনের ছালের গুড়াবাসক পাতার রসে ভিজিয়ে ঘি মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
হাঁপানি ও হার্ণিয়াঃ- এছারা হাঁপানিতে অর্জুন ফল টুকরো করে তামাকের মত ধোঁয়া টানলে উপকার হয়। হার্নিয়াতে অর্জুন ফল কোমরে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা পাতার রস সেবনে আমাশয় রোগ ভাল হয়।হৃদপিন্ডের দুর্বলতা ও সাধারণ দুর্বলতায়ঃ- ৩-৪ গ্রাম অর্জুন ছাল চূর্ণ প্রত্যহ দুবার এক গ্লাস পরিমাণ দুধসহ সেব্য । এক মাস নিয়মিত সেবন করে যাওয়া আবশ্যক।
রক্ত আমাশয় নিরাময়েঃ- কাচাঁ অর্জুনের ছাল ৫ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে ভালোভাবে পিষে ঠাণ্ডা জলসহ দিনে দুবার খেলে রক্ত আমাশয়ে বিশেষ উপকারী
লো - ব্লাড্প্রেসারে - উপরিউক্ত পদ্ধতিতে তৈরীকরে খেলে প্রেসার স্বাভাবিক হয়।
যাঁদের প্রস্রাবের সঙ্গে Puscell বা পুঁজ বেশী যায়, তাঁরা ৩/৪ গ্রাম শুকনো অর্জুন ছাল আধপোয়া আন্দাজ গরম জলে ৪/৫ ঘন্টা ভিজিয়েপরে ছেঁকে তার সঙ্গে একটু রান্না করা বার্লিমিশিয়ে খেলে ওটা চলে যাবে।
ফোঁড়াঃ-ফোঁড়া হলে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলে ফোঁড়াফেটে যায়, তারপর পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
ক্ষত বা ঘা:- শরীরে ক্ষত বা ঘা হলে, খোস-পাঁচড়া দেখাদিলে অর্জুনের ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুয়ে ছালেরমিহি গুঁড়া জল দিয়ে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ঘাসেরে যায়।
কানের ব্যথায়:- কানের ব্যথায় অর্জুন ব্যবহার করা হয়। কচিপাতার রস কানের ভিতরে দুই ফোঁটা করেদিলে কানের ব্যথা ভালো হয়।
অ্যাজমাঃ-অর্জুন ছালের পাউডার ১২ গ্রাম দুধের ক্ষীর বাপায়েসের সাথে মিশিয়ে খেলে অ্যাজমাআক্রান্ত ব্যক্তির অ্যাজমা রোগের স্থায়ীসমাধান হবে।
ক্ষয়কাশে:- অর্জুন ছালের গুঁড়া, বাসক পাতার রসেভিজিয়ে শুকিয়ে রাখতেন প্রাচীন বৈদ্যেরা।দমকা কাশি হতে থাকলে একটু ঘি ও মধু বামিছরির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে দিতেন। এতে কাশির উপকার হতো।
হাড় মচকে গেলে বা চিড় খেলেঃ- অর্জুন ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম করেমচকানো জায়গায় লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরেযায়। তবে সেই সাথে অর্জুন ছালের চূর্ণ ২-৩গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি ও সিকি কাপ দুধমিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো হয়।
ত্বকের পরিচর্যা:- ত্বকে ব্রণের ক্ষেত্রে অর্জুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করে। ছালের চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়েব্রণের উপর লাগালে খুব দ্রুত উপকার হয়। এছাড়া ছালের মিহি গুঁড়া মধু মিশিয়ে লাগালে মেচতার দাগ দূর হয়।
বুক ধড়ফড়ঃ- যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপনেই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মিলি জলের সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলিথাকতে ছেঁকে বিকাল বেলা খেলে বুকধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে। তবে পেটে যেনবায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রক্তপিত্তেঃ- মাঝে মাঝে কারণে বা অকারণে রক্ত ওঠে বাপড়ে। সেক্ষেত্রে ৪-৫ গ্রাম ছাল রাত্রিতে পানিতেভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে পানিটাখেলে উপকার পাওয়া যায়।
শ্বেত বা রক্তপ্রদরেঃ- উপরিউক্ত মাত্রা মত ছালভিজানো জল আধ চামচ আন্দাজ কাঁচাহলুদের রস মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
রক্তচাপ কমাতেঃ- বিচূর্ণ ফল রক্তচাপ কমায় মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভার সিরোসিস টনিক হিসেবে কাজ করে।
মাড়ির রক্তপাত বন্ধেঃ- এই ছাল মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহের চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়, এটি মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন