সফল উদ্যোক্তা কোন বাধাই যাকে দমাতে পারেনি অদম্য আগ্রহের জন্য ....!!!

অষ্টম শ্রেণীর পর্যন্ত লেখাপড়া ফাহিমুল করিমের জন্য তাঁর শারীরিক বাধা কোনো ‘বাধা’ হয়ে ওঠেনি।


ঘরে বসেই ওয়েবসাইট থেকে কাজ নিয়ে আয় করছেন এই তরুণ।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভার ও আপওয়ার্কে কাজ করেন ফাহিমুল। তাঁর মতো বাংলাদেশের অনেকেই এখানে কাজ করছেন। তবে ফ্রিল্যান্সারদের গ্রুপে ফাহিমুলকে নিয়েই ব্যাপক আলোচনা।
মাগুরার ছেলে ফাহিমুলের (২১) জীবন আর সবার মতো নয়। ডুচেনেমাসকিউলার ডিসথ্রফি নামে জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সেই তাঁর শরীরের পেশি শুকিয়ে যায়। তবে রোগের কাছে হার মানেননি ফাহিমুল। মনোবল হারাননি। অদম্য লড়াকু ফাহিমুল এখন সফল ফ্রিল্যান্সার।
ছোটবেলায় সাইকেল চালাতেন ফাহিমুল। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন। পড়ালেখাতেও ছিলেন মেধাবী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। ২০১২ সালের শেষ দিকে জেএসসি পরীক্ষার ঠিক আগে বিছানায় পড়ে যান। ধীরে ধীরে তাঁর পেশি শুকিয়ে যেতে থাকে। তারপর একেবারেই অকেজো হয়ে যায় হাত-পা থেকে শুরু করে পুরো শরীর। মাগুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়তেন ফাহিমুল। রোগে পড়ে একপর্যায়ে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।
ফাহিমুলের বাবা রেজাউল করিম। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির বিপণন বিভাগে কাজ করতেন। মা হাজেরা খাতুন গৃহিণী। ছোট এক বোন নবম শ্রেণিতে পড়ে।
জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ফাহিমুলের জীবন অনেকটা ‘বিছানাবন্দী’ হয়ে যায়। দৈনন্দিন কাজের জন্য তাঁকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফাহিমুলের স্বপ্নটা সেখানেই স্থবির হয়ে যেতে পারত। কিন্তু দৃঢ় মনোবল তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। এই তরুণ বিশ্বাস করেন, শারীরিক অক্ষমতা মানেই সবকিছু থেমে থাকা নয়। মনের জোরে জেগে ওঠেন তিনি। একপর্যায়ে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করেন। এখন আপওয়ার্কে প্রতি ঘণ্টায় তাঁর রেট ৮ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৭০ টাকা।
আপওয়ার্কের টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার ফাহিমুল করিম। ছবি: প্রথম আলো
ফাহিমুলের জীবন ও সংগ্রামের গল্পটা তাঁর কাছ থেকেই শোনা যাক। ফাহিমুল বলেন, ‘২০১২ সালের কথা। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। জেএসসি পরীক্ষার ঠিক দুই–তিন দিন আগে আমার চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। রোগটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। ডাক্তার বলেছিলেন, একসময় এমন হবে। আস্তে আস্তে শরীর একদম শুকিয়ে যাবে। শক্তি হারিয়ে যাবে। এমনকি হয়তো ১৮ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকব। এই অবস্থাতেই জেএসসি পরীক্ষা দিই। ভালো রেজাল্টও করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নবম শ্রেণিতে আমার আর ভর্তি হওয়া হয় না। সেখানেই আমার পড়ালেখার ইতি ঘটে। ছোটবেলা থেকেই আমার নতুন বিষয় শেখার ব্যাপারে খুব আগ্রহ ছিল। সেটা বই পড়ে হোক, কারও কাছ থেকে হোক বা টেলিভিশন দেখেই হোক। নবম শ্রেণিতে ভর্তি না হলেও বিজ্ঞান বিভাগের বইগুলো বাসায় এনে দিয়েছিলেন আম্মু। সেগুলো নিজে নিজে পড়তাম। একসময় আমি ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম। সবাই আমার বাসায় এসে পড়ত।’

প্রাইভেট পড়িয়ে ফাহিমুলের কিছু টাকা জমে। বাসা থেকে আর কিছু টাকা নিয়ে ২০১৪ সালের শেষ দিকে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনেন তিনি। ইন্টারনেটে সংযুক্ত হন। তারপর ধরে ধীরে গুগল, ইউটিউব সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকের একটা পেজে ইন্টারনেটে আয় করা সম্পর্কে জানতে পারেন ফাহিমুল। তিনি প্রথমে জেনেছিলেন টি-স্প্রিং সম্পর্কে। ভেবেছিলেন মোবাইল দিয়েই কাজ করা যাবে। কয়েক দিনের চেষ্টায় ব্যর্থ হন। একটা কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা খুব করে অনুভব করেন। বাসায় বলেন। কিন্তু বোঝাতে পারেননি। তা ছাড়া অর্থেরও সংকট ছিল।
হাল ছাড়েননি ফাহিমুল। তিনি বলেন, ‘পরে একটা গ্রুপে যুক্ত হলাম। নাম ছিল ওডেস্ক বাংলাদেশ (বর্তমানে আপওয়ার্ক বাংলাদেশ)। ওখানে দেখতাম, সবাই অনলাইনে কাজ নিয়ে কথা বলত। আমি সবার পোস্ট, কমেন্ট নিয়মিত পড়তাম। সেখানেরই একটা পোস্ট থেকে ওয়েব ডিজাইনের কথা জানতে পারি। ওখানে কিছু লিংক দেওয়া ছিল। আমি সেগুলো ডাউনলোড করে পড়ে পড়ে এইচটিএমএলটা প্রায় শিখে ফেলি। কিন্তু কিছুদিন পর অধৈর্য লাগছিল। ভাবলাম, এভাবেও সম্ভব না। আমাকে নির্দিষ্ট কোনো কাজ শিখতে হবে। কাজ শিখতে চাই বলে গ্রুপে পোস্ট দিই। গ্রুপের একজন অ্যাডমিন আমার এলাকার একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি কিছুদিন পর আমার বাসায় এসে আমাকে কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেন। গ্রাফিকস ডিজাইন সম্পর্কেও ধারণা দেন। কিন্তু তখনো আমার কম্পিউটার ছিল না৷’
পরিচিতদের উদ্যোগ, মায়ের জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে ২০১৬ সালের নভেম্বরে একটা ল্যাপটপ কেনেন ফাহিমুল। ল্যাপটপ ব্যবহার আয়ত্তে এলেও নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না তাঁর। একটা ডিভিডি কিনে গ্রাফিকস ডিজাইন শেখা শুরু করেন তিনি। তারপর নিয়মিত চর্চা। শুরুতে শেখেন ফটোশপ। অন্য দরকারি বিষয়গুলো ইউটিউব দেখে শিখন। ফাহিমের বর্তমান ইনকাম প্রায় প্রতিমাসে এক লক্ষ টাকা.....!!!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার

সিরকা বা ভিনেগার কি.. এর উপকারিতা কি...?

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!