উদ্যোক্তা হবার এক দৃষ্টান্ত


এই যুবক সখের বশে মাত্র ২০টি বিদেশী জাতের কবুতর দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করেন। এরপর শুধুই সফলতার গল্প। এখন তার খামারে নানান প্রজাতির ১৫০ জোড়া কবুতর রয়েছে। আর সেখান থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসিক আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কোন কোন মাসে আয় হয় এর চেয়ে বেশি।
কঠোর পরিশ্রম আর কবুতরের প্রতি নিবির ভালোবাসা শিক্ষিত এই বেকার যুবককে এনে দিয়েছে সফলতা। পাশাপাশি ঘুচেছে বেকারত্বের অভিশাপ। মেহেদির দেখা দেখি ৫০ জনেরও বেশি বেকার যুবক এখন কবুতর পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তার পরামর্শ নিয়ে ৫০ জনেই কবুতর পালন শুরু করেছেন। অন্যদিকে তার সহায়তায় বাংলাবাজারে একটি কবুতরের দোকানও চালু হয়েছে।
সরেজমিনে বাংলাবাজার এলাকায় মেহেদির খামারে গিয়ে দেখা যায় তিনি কবুতর পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন। লোহার গ্রিল চারপাশে ও উপরে টিন শেড দেওয়া হয়েছে খামারে। খাঁচার মধ্যে শোভা পাচ্ছে হড়েক প্রকার কবুতরের সারি। এসময় মেহেদী জানান, ২০১৭ সালে শখের বসে ২০ জোড়া কবুতর নিয়ে খামার শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই কবুতরের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর মমতা ছির তার।
পর্যায়ক্রমে গত ২ বছরে খামারে কবুতরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর অনলাইল ও ফেইজবুকে তার কবুতরের বাচ্চা বিক্রির বিজ্ঞাপনে বেশ সারা পড়ে যায়। তার উৎপাদিত কবুতরের বাচ্চা অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ভোলা, বরিশাল, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা শুরু করেন।
তিনি জানান, খামারে বিভিন্ন জাতের কবুতরের মধ্যে ১ লাখ টাকা মূল্যের আরএসপি কোএলমোন্ড জাতের কবুতর রয়েছে, যার প্রতি জোড়া বাচ্চার মূল্য ৪০ হাজার টাকা। রয়েছে ৪০ হাজার টাকা দামের লাহরী (লাল), এর বাচ্চার দাম ১৫ হাজার। বোখরা হোয়াইট টব কবুতর, যার দাম (প্রাপ্তবয়স্ক) জোড়া প্রতি বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা, আর বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
এছাড়া আরএসপি পোর্টার (ব্লু) রয়েছে ৩০ হাজার টাকা দামের, এগুলোর বাচ্চা বিক্রি হয় ৮ হাজার টাকায়। এছাড়া পূর্ণ বয়স্ক ডেনিস (সাদা) জোড়া বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকা, ডেনিস (হলুদ) ১৫ হাজার, হাউস পিজন ১২ হাজার, ১০ হাজার টাকার কোকা বাসিরাজসহ বিভিন্ন জতের আকর্শনীয় রঙের কবুতর রয়েছে। এছাড়া পেনসিল পোর্টার, হেনা পোর্টার, কুমারিয়ান, উলো মালটেসসহ ৩০ প্রজাতীর বেশি কবুতর রয়েছে মেহেদীর খামারে।
কবুতর প্রেমী মেহেদী হাসান আরো বলেন, কবুতর পালনে তেমন একটা পরিশ্রম করতে হয় না। সকাল-বিকাল ২ ঘন্টা করে মোট ৪ ঘন্টা সময় দিলেই হয়। এসব কতুরকে ধান, গম, চিনা, এংরা, ডাবলিসহ প্রায় ১৫ ধরনের খাবার মিশিয়ে দিতে হয়। দৈনিক তার ১ হাজার টাকার খাবার দিতে হয়। কবুতরের তেমন রোগ বালাই হয়না। আর রোগ হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে চিকিৎসা সর্ম্পকে জানা যায়। একইসাথে ফেইজবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে রোগের সমাধান পাওয়া যায়।
বাংলাবাজার এলাকায় মেহেদী হাসানের কাছ থেকে কবুতর নিয়ে দোকান দিয়েছেন মো: ফয়সাল। তিনি বলেন, এই এলাকায় দেশি কবুতরের চাহিদা থাকলেও বিদেশীর তেমন বাজার ছিলোনা। কিন্তু মেহেদীর খামারের সফলতা দেখে এখন অনেকেই উন্নত জাতের কবুতর ক্রয় করছেন। বর্তমানে এখানে সিমিত হলেও বিদেশী কবুতরের বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
কবুতর শিল্পের প্রধান সমস্যার কথা উল্লেখ করে খামারী মেহেদী বলেন, কবুতর বিদেশ থেকে আমদানী করা গেলেও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানী করা যায়না। তাই এ শিল্পের আরো সম্প্রসারনের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। একইসাথে আরো বৃহৎ পরিসরে খামার গড়ে উদ্যেক্তা হওয়ার স্বপ্ন মেহেদীর।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, কবুতর পালন একটি শখের বিষয় হলেও তা বর্তমানে বেশ লাভজনক। এর মাধ্যমে বেকারত¦ দূরসহ বাড়তি আয়ের সুজোগ রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের খামার করা একটি ভালো ব্যাপার। বর্তমানে জেলায় অনেকেই বিদেশী কবুতর পালন করছেন। আমাদের যুব সমাজকে যদি এই শিল্পের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তবে এই খাত আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষন, পরামর্শসহ সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার

সিরকা বা ভিনেগার কি.. এর উপকারিতা কি...?

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!