জীবন পাল্টে যাওয়ার অমূল্য গল্প.....
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বেড়াতে গেছেন রোমানিও স্বামী-স্ত্রী। একদিন একটি নির্জন, বরফে ঢাকা পাহাড়ী এলাকা ঘুরতে যান তারা। হাঁটতে হাঁটতে একসময় পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তায় পথ হারিয়ে পেলেন ওই দম্পতি। পথ খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যা নামলে দিশেহারা হয়ে পড়েন। দ্রুত অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে চারদিক। কনকনে শীত, সাথে হিমেল হাওয়া আর অদ্ভুত একটা ভয় গ্রাস করে তাদের। চারদিকে পিনপতন নিরবতা। মাঝে মাঝে শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকে পরিবেশটাকে আরো ভারি করে তুলছে।
হঠাৎ দেখতে পেলেন দুরে কোথাও হালকা একটা আলো জ্বলছে। মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে তারা সেদিকে হাঁটতে লাগলেন। কাছে গিয়ে দেখলেন, একটি কুঁড়েঘর।
দরজায় টোকা দিতেই একজন জীর্ণ-শীর্ণ মধ্য বয়স্ক লোক দরজা খুলে দিলেন। অসময়ে অপরিচিত মানুষ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন গৃহকর্তা।
আগন্তুক বিস্তারিত জানিয়ে লোকটির কাছ থেকে সহযোগিতা চাইলেন। অতি বিনয়ের সাথে গৃহকর্তা তাদের ভিতরে এসে বসতে বললেন। কুড়েঘরে আরো ছিলেন লোকটির বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ে। আগন্তুক গৃহকর্তাকে হোটেলের কার্ড দেখিয়ে যাওয়ার উপায় জানতে চাইলেন।
অন্ধকারে পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হোটেলে যাওয়া এই মুহুর্তে নিরাপদ নয় বললেন গৃহকর্তা। রোমানিও দম্পতি মহা পেরেশনিতে পড়ে গেলেন। গৃহকর্তা তাদেরকে কুড়েঘরে রাত যাপনের জন্য বিনীত অনুরোধ করলেন।
গরিব লোকটি আগন্তুকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা এবং ঘুমানোর জন্য সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব ভালো ব্যবস্থা করলেন।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে রোমানিও দম্পতি দেখেন, কুড়েঘরে একটি মাত্র রুম যাতে তারা ছিলেন।
‘তাহলে ৫ সদস্যের পরিবারটি গেলেন কোথায়’-আগন্তুকদের মনে প্রশ্ন জাগে।
তারা কুড়েঘরের আশেপাশে খুঁজতে লাগলেন। একপর্যায়ে রোমানিও স্বামী-স্ত্রীর দেখেন, দুরে একটি গাছের গোড়ায় কারা যেন শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে দখেন, গরিব লোকটি বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে জবুথবু হয়ে শুয়ে আছে।
সারারাত এখানেই ছিলেন? গৃহকর্তার কাছে আগন্তুকের প্রশ্ন।
হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন তিনি। আর কোথাও থাকার জায়গা নাই বলে এখানেই ছিলেন, জানালেন লোকটি।
খ্রীস্টান দম্পতির চোখে-মুখে রাজ্যের বিস্ময়। স্বামী-স্ত্রী কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। রাজ্যের নিরবতা যেন গ্রাস করেছে চারিদিক।
কেন আমাদের জন্য সব ছেড়ে দিয়ে কনকনে ঠান্ডায়, বরফে ঢাকা গাছের গোড়ায় আশ্রয় নিলেন? আমরা তো আপনাদের আত্মীয় কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী না। এমনকি আপনাদের ইসলাম ধর্মের অনুসারীও না। তাহলে কেন এই অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করলেন?
লোকটির ঝটপট উত্তর, পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরীফে মহান আল্লাহ বলেছেন, মানুষের সেবা করতে এবং কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করার জন্য কোরআনে বার বার বলা হয়েছে। আমরা আল্লাহর আদেশ পালন করেছি মাত্র।
রোমানিও দম্পতির চোখে পানি। কৃতজ্ঞতায় তাঁদের বুক ভরে গেল। কৌতূহলী হয়ে তারা জানতে চাইলেন, কোরআন শরীফে আর কি কি আছে?
আমি মুর্খ মানুষ। খুব বেশি জানিনা। আপনারা কোরআন কিনে পড়ে জেনে নিতে পারেন। লোকটির সরল স্বীকারোক্তি।
রোমানিও দম্পতি তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে যাওয়ার আগেই লাইব্রেরীতে গিয়ে কোরআন সংগ্রহ করলেন। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় অল্প ক’দিনে তারা পবিত্র কোরআন পড়া শেষ করলেন।
সৌদি আরবের ‘হুদা’ চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে রোমানিও দম্পতি বলেন, ‘কোরআনের প্রতিটি পাতা পড়া শেষে মনের মধ্যে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হতো। সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিজের অজান্তে মাথা নুয়ে পড়ত। ভাবতাম, কতই না ভুলের মধ্যে ছিলাম এতদিন! এ এক অনন্য অনুভূতি ছিল, যা বলে বোঝানোর ভাষা নাই। প্রতিটি সূরা শেষ করে আকাশের দিকে তাকাতাম আর সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতাম! কান্নায় বুক ভেসে যেত। তবুও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম আকাশ পানে। ’
কোরআন পড়া শেষে কালক্ষেপন না করে স্বামী-স্ত্রী ইসলাম গ্রহন করেছেন। তারা বলেছেন, কোরআনের মর্মবাণী যারাই উপলব্দি করবেন, সে যেই হোক তার চেতনায় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
রোমানিয়ায় ফিরে গিয়ে তারা একটি ইসলামিক সেন্টার খোলেন। পরিচিত, অপরিচিতদের মাঝে পবিত্র কোরআনের বাণী পৌছে দেবার ব্রতে স্বামী-স্ত্রী মানুষের দোরগোড়ায় গেলেন। ব্যাপক সাড়া পেয়ে দ্বিগুন উৎসাহে ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে লাগলেন।
তাদের অল্প কয়েকদিনের প্রচারণায় প্রায় চার হাজার রোমানিও ইসলাম গ্রহন করেন।
পাদটিকাঃ একটি দরিদ্র পরিবারের এক রাতের ত্যাগের বিনিময়ে কেবল একটি দম্পতি ইসলাম গ্রহন করেননি, হাজার হাজার রোমানিও মুসলমান হয়েছেন। এটাই নবিজির (সা.) শিক্ষা।
আসুন, আমরা কোরআন বুঝে পড়ি। কোরআনের মর্মার্থ অনুধাবনের চেষ্টা করি। আল্লাহ এবং রাসুলের (সা.) নির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালিত করি।
আসুন, মানুষের সেবা করি; সবধরনের ভন্ডামি পরিহার করি। সত্যিকারের ঈমানদার হই। তাহলে ঐ গরিব লোকটির মতো আমরাও কামিয়াব হবো।
আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।
(সৌদি আরবের ‘হুদা’ চ্যানেলে দম্পতির দেয়া সাাাক্ষাৎ থেকে নেয়া)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন