উদ্যোক্তা নারীর অদম্য এক গল্প
বিশ্বখ্যাতি মুর নামে। পুরো নাম অ্যান এস মুর। বর্তমান আধুনিক বণিক বিশ্বেও অন্যতম আলোচিত নাম এখন মুর। ভালো বেতনের সুনিশ্চিত চাকরি ছেড়ে মুর বনে গেছেন সফল উদ্যোক্তা। হয়ে উঠেছেন সফল নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ্য উদাহরণ। বিখ্যাত মিডিয়া প্রতিষ্ঠান টাইম ইঙ্ক ডটকমের প্রথম নারী সিইও এবং চেয়ারম্যান অ্যান মুরের কর্মজীবনের সূচনা একজন ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট হিসেবে। শিক্ষাজীবনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে যোগ দেন টাইম ইঙ্ক ডটকমে। ১৯৭৮ সাল থেকে সুদীর্ঘ ৩৫ বছরের একটানা কর্মজীবনে পরিশ্রম, অদম্য আগ্রহ আর পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ক হিসেবে অ্যান মুর নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
একেবারেই একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কখনওই খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। কারণ প্রতিটি সফলতার পেছনে উপযুক্ত পরিকল্পনাই মুখ্য চালিকাশক্তি যোগায়। তাই কর্মজীবনের শুরু যেমনই হোক না কেন, একমাত্র সঠিক পরিকল্পনাই সফলতা এনে দিতে পারে। নিজের সফলতার মূলমন্ত্রকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন মুর।
শিক্ষাজীবনের একেবারে শুরু থেকেই অ্যান ‘টাইম ইঙ্ক’ ম্যাগাজিনের নিয়মিত পাঠক ছিলেন। আর ঠিক বোধহয় তখন থেকেই স্বপ্ন বুনতেন নিজেকে এ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি করে তোলার। হয়ত সে জন্যই বেশ ভালো ভালো অফার থাকা সত্ত্বেও ‘টাইম ইঙ্ক’ থেকে অফার পাওয়ামাত্রই তুলনামূলক কম বেতনের চাকরিতে যোগ দেন। কর্মজীবনের প্রায় পুরো সময়ই তিনি এখানে কাটিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে তিনি ‘পিপলস ম্যাগাজিনের’ প্রকাশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে ‘পিপলস প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে দায়িত্ব পান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে তিনি টাইম ইঙ্ক’র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
২০০২ সালের জুলাই মাসে অ্যান মুর ‘টাইম ইঙ্ক’র ইতিহাসে প্রথম নারী সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর কৃতিত্বের সঙ্গে সুদীর্ঘ সময় সিইও এবং ‘টাইম ইঙ্ক ডটকম’ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ সাল অবধি। বিখ্যাত ‘ফরচুন ম্যাগাজিন’ সব মিলিয়ে দশবার অ্যান মুরকে ‘আমেরিকার পাওয়ার ফুল বিজনেস উইমেন’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়াও ‘ফোর্বস ম্যাগাজিনে’ বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে অ্যান মুরের নামও উঠে এসেছে। তরুণদের জন্য অ্যান মুর সব সময়ই প্রণোদনা জুুগিয়েছেন তার উদীপ্ত ভাষায়। তিনি বিশ্বাস করেন, জীবন নিয়ে অবশ্যই কোনো পরিকল্পনা থাকতে হবে। সম্পূর্ণ জীবনের জন্য তুমি, একমাত্র তুমিই দায়ী থাকবে, অন্য কেউ নয়। ২০১০ সালে চাকরি জীবন থেকে বিদায় নেন মুর। ব্যক্তিজীবনে অ্যান নেলসন ম্যান্ডেলার ভক্ত। তাই তিনিও বিশ্বাস করেন 'No is a complete sentence'।
গত ৪ বছর মুর সময় কাটিয়েছেন তার পুরো জীবনের অর্জন, অপ্রাপ্তি নিয়ে গবেষণা করে। সুদীর্ঘ সময়ের কর্মময় স্মৃতিগুলো নিয়েও ভেবেছেন তিনি। সেই অবসর সময়েই পরিকল্পনা করলেন এমন কিছু করার যা তার বাকি জীবনের কর্মক্ষম সময়কে আরও সমুজ্জ্বল করবে। এসব কাজ তার মৃত্যুর পরও সগৌবরে টিকে থাকবে। এমন ভাবনা থেকেই তিনি শুরু করেন ‘দ্য কিউরেটোর গ্যালারি’। একজন সফল সিইও থেকে এবারে নিজেকে সফল ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন