শূন্য হাতে শুরু এক হতদরিদ্র উদ্যোক্তার গল্প....

মাত্র ৩০০ টাকায় শুরু হলো জীবন যুদ্ধ :



 শূণ্য হাতে প্রথমে ঠাই হয় সদ্য সঙ্গী হওয়া সুফিয়ার বড় ভাই হতদরিদ্র রিক্সাচালক মো. শহীদ এর ছোট্ট ঘরে। অভাবের সংসারে কখনো ১ বেলা খেতে পান, কখনো মাত্র ২টাকার মুড়ি কিনে স্বামী-স্ত্রী মিলে ৩ বেলা খেয়ে কাটান। এরই কিছুদিনের মধ্যে অভাব ও বেকারত্বকে জয় করতে কুদ্দুস বসে না থেকে স্ত্রীর বিয়ের শাড়ি মাত্র ৩০০ টাকায় বন্ধক রেখে তা পুঁজি করেই নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজারে পাতিতে করে আমড়া, পাকা বড়ই বিক্রি শুরু করেন। বিক্রি ভাল হতো। লাভের সামান্য টাকায় ২ বেলা কোনোমতে পেটে ভাত জুটল ২ জনের। এদিকে ২ মাস পরই ৬০ টাকা অতিরিক্ত লাভ গুণে ৩৬০ টাকায় স্ত্রীর সেই শাড়ির বন্ধকী ছাড়িয়ে এনে দেন তিনি। অভাবের সংসারে এলো প্রথম পুত্র সন্তান। চাহিদা বাড়ল। সেই সাথে নিজের পরিশ্রমের মাত্রাও বাড়িয়ে দিলেন তিনি। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ৯৫তে শুরু হলো তার আচারের ব্যবসা। বাড়িতে স্ত্রী দিন-রাত শীল পাটায় বেটে আচারের নানা উপকরন মিক্সড করে দিতেন, স্বামী তা নিজের মেধা ও সৃজনশীলতা দিয়ে তৈরি করলেন আলাদা ধরনের এক আচার। যে আচার স্বাদ-গন্ধ ও দেখতে অন্য অনেকের আচারের থেকে ভিন্ন। এভাবে চলতে থাকল। প্রতিদিন বেলা ১১টায় খানপুরের বাসা থেকে ৬০ কেজি ওজনের এ আচারের বাক্স-পেটরা মাথায় করে নিয়ে এসে রাত ৮টা পর্যন্ত একটানা দাঁড়িয়ে বিক্রি করেন তিনি। আম, আমড়া, চালতা, বড়ই, তেঁতুল, রয়েল, করমচা, বোম্বাই মরিচ, রশুন, আমলকি সহ আরো কয়েকটি আইটেমের প্রায় ১৮ পদের আচার তৈরি করেন তিনি। স্ত্রী সুফিয়া জানান, ‘‘আমরা নানা পদের আচারের জন্য প্রধান উপকরনগুলো যেমন আম, চালতা, বড়ই যা সারা বছর পাওয়া যায়না, তা আগেই পুরো বছরের হিসেবে করে সংগ্রহ করে রাখি। এর জন্য বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। তাই যে সময়ে এসব এককালীন ফলের আচার অনেকের কাছে পাওয়া যায়না, তখনো আমার স্বামীর কাছে এই আচার পাওয়া যায়। যে আচার একবার খেয়ে না দেখলে কখনো এর স্বাদ চিন্তাই করতে পারবেন না।’’ এভাবে দিন দিন বাড়তে থাকল তার হাতে তৈরি আচার প্রেমীদের সংখ্যা। অর্ডার আসতে লাগল বাসা বাড়ি, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য। এমনকি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্বরত অনেক সরকারী-বেসরকারী  কর্মকর্তাদেরও অর্ডার আসা শুরু হলো। মো. কুদ্দুস জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে পারিবারিক বিয়ে/হলুদ/জন্মদিন/সাংগঠনিক সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তার আচারের জন্য অর্ডার করা হয়। যার জন্য প্রথমে তাকে এডভান্স করতে হয় ৫০% টাকা। এখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে বড় অর্ডারটি ছিল ৩ লাখ টাকার। শুধুমাত্র ১দিনের সেই অনুষ্ঠানে ৩ লাখ টাকার আচার বিক্রি করেছেন তিনি। একই ধরনের অসংখ্য অনুষ্ঠানে নিজের তৈরি আচার নিয়ে অংশ নেন তিনি। মো. কুদ্দুস জানান, এত টাকার আচার নিয়ে যাবার জন্য আয়োজকদের পক্ষ থেকে কাভার্ড ভ্যানের ব্যবস্থা করা হয়। আর যদি কোনো কোনো অনুষ্ঠান আয়োজকরা তা না করেন তাহলে নিজেই ব্যবস্থা করি। তবে এর জন্য আগেই আলোচনার সময় অর্ডারের সাথে যাতায়াত খরচ নিয়ে নিতে হয়। তিনি আরো বলেন, আগে স্ত্রী শীল পাটায় পিষে আচারের মূল উপকরণ তৈরি করতে হতো, কিন্তু এখন আধুনিক ব্লেন্ডার মেশিন থাকায় অল্প সময়ে অনেক আচার তৈরি করা যায়। তাই বেশি বেশি অর্ডার নেয়াও সম্ভব হচ্ছে। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে মো. কুদ্দুস বলেন, স্ত্রীর সহযোগিতা আছে বিধায় সেদিনের সেই ৩০০ টাকা পুঁজি থেকে আজ আমার পুঁজি প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। এখন আমার সংসারে কোনো অভাব নেই। বড় ছেলে গ্রাজ্যুয়েশন শেষ করে সম্পূর্ণ নিজ চেস্টায় ‘ইভেন ম্যানেজমেন্ট’ এর ব্যবসা শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই তার এই কাজ বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে বেশ প্রশংসিতও হয়েছে। ছোট ছেলে এবার ১০ম শ্রেণীতে পড়ছে। এখন আমাদের ঘরে কোনো অভাব নেই। মো. কুদ্দুস ও তার স্ত্রীর মতো অসংখ্য সফল ব্যক্তি আছেন যাদের সাফল্যের গল্পগুলো এক একটি গল্প-উপন্যাস কিংবা সিনেমাকেও হার মানায়। তেমনি আরো গল্প নিয়ে পরের সংখ্যায় আবারো হাজির হবো আপনাদের মাঝে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!

থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি....?

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার