বেইজিং হাস পালনে ভাগ্য বদল....



আমাদের দেশের আবহাওয়া চীনের বেইজিং হাঁস পালনের উপযোগী হওয়ায় খামারিরা এই হাঁস পালন শুরু করেছেন এবং সফলতা পাচ্ছেন। লাভজনক হওয়ায় এ প্রজাতির হাঁস পালন বাড়ছে। চাটমোহরের আড়িংগাইল গ্রামের উদ্যোক্তা আবু বিন হিরো নিজ গ্রামে তিন একর পুকুরের পাড়ে বাণিজ্যিকভাবে বেইজিং জাতের হাঁস পালন করছেন। পুকুরের ওপরে আংশিক জায়গায় বাঁশের মাচা বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ হাঁসের খামার। হাঁসগুলো পুকুরপাড়ে ও বাঁশের মাচার ওপর খাবার খায়। হাঁসের মল ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ পুকুরের পানিতে পড়ায় পুকুরে চাষকৃত মাছকে পৃথক খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। পানিতে একই সাথে সাঁতরে বেড়ায় হাঁস ও মাছ। এভাবে হাঁসের পাশাপাশি ফ্রি মাছ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রথম দিকে অনেকে বিদ্রƒপ করলেও এখন তারাই হিরোর প্রশংসা করেন।
তাইজুল ইসলামের ছেলে আবু বিন হিরো জানান, ২০০৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এমকম পাস করে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। চাকরিরত অবস্থায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন। ২০০৮ সালে স্ত্রীসহ ব্যাংকক সফরকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার জুয়েলের হোটেলে খেতে গিয়ে প্রথম বেইজিং হাঁসের গোশত খান। গোশত সুস্বাদু হওয়ায় বেইজিং হাঁস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে পরদিন জুয়েল একটি বেইজিং হাঁসের খামার দেখাতে নিয়ে যান। মূলত সেখান থেকেই এ হাঁস পালনের চিন্তা তার মাথায় আসে। দেশে ফিরে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আবদুল হামিদের তত্ত্বাবধানে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ১৮০টি এক দিনের বেইজিং হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করে হ্যাচারি করেন। বাড়তে থাকে খামারের হাঁসের সংখ্যা। নতুন শেড করেন। বর্তমান তার ইউনিডস এগ্রো খামারে এক হাজারের বেশি হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ ডিম পাচ্ছেন। তুষ পদ্ধতিতে হারিকেনের আলোর উত্তাপে প্রতি পাঁচ দিন পরপর দুই হাজার করে বাচ্চা পাচ্ছেন। মাসে প্রায় ১০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করছেন। প্রতিটি এক দিনের বাচ্চা পাইকারি ৭০ টাকা ও খুচরা ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। মাসে প্রায় সাত লাখ টাকার বাচ্চা বিক্রি করছেন। এ ছাড়া যে ডিমগুলো থেকে বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব নয় সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এ কাজে উত্তরা ব্যাংক পাবনা শাখা তাকে কিছু অর্থনৈতিক সহায়তা করে। হাঁস পালন শুরু করার আগে পুকুর লিজ দিয়ে বছরে তিন লাখ টাকা পেতেন। এখন সে পুকুরে নিজে মাছ চাষ করে বছরে অন্তত ছয় লাখ টাকার মাছ পাচ্ছেন। তার খামারে দুইজন হ্যাচারি টেকনিশিয়ানসহ ছয়জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের পাশাপাশি যারা বেইজিং হাঁসের খামার করছেন তারাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
হিরো আরো জানান, দেশী হাঁসের তুলনায় এর গোশত বেশি সুস্বাদু। কোলস্টেরলের পরিমাণ কম। তিন মাসে হাঁসগুলোর গড় ওজন প্রায় পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়। খাবার বেশ কম লাগে। পূর্ণবয়স্ক হাঁস ৯০ থেকে ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে এবং প্রায় আঠারো মাস ডিম দেয়। চার মাস বয়স থেকে এ হাঁস ডিম দিতে সক্ষম হলেও ছয় মাস বয়স থেকে ডিম সংগ্রহ করা উত্তম। খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেরিতে ডিম নেয়া সম্ভব। আন্তর্জাতিক বাজারে বেইজিং হাঁসের গোশতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমান এ হাঁসের গোশত ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে যাচ্ছে। মালদ্বীপে স্যাম্পল পাঠিয়েছেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করছেন, এ গোশত বিদেশে রফতানি করতে পারবেন।
উচ্চশিক্ষিত এ উদ্যোক্তাকে একই সাথে হাঁস পালন ও মাছ চাষ করে অর্থিকভাবে লাভবান হতে দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হয়ে এ প্রজাতির হাঁস পালন শুরু করছেন। পোলট্রি শিল্পে বেইজিং হাঁস পালন খুলে দিতে পারে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। হিরোর স্ত্রী বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত ওয়াহিদা সুলতানা প্রতিনিয়ত তার স্বামীকে উৎসাহ দেন বলে জানান আবু বিন হিরো।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!

থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি....?

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার