ভজ্য তেলের নতুন সম্ভাবনা

ভোজ্য তেলের বিকল্প হতে পারে ‘গোল্ডেন পেরিলা’....!
দেশে বাড়ছে ভোজ্য তেলের চাহিদা। আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং মানসম্মত ভোজ্য তেলের ফলন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই দেশে ভোজ্য তেলের বিকল্প হতে পারে নতুন তেল ফসল ‘গোল্ডেন পেরিলা’। দুই বছর ধরে গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশী গবেষক দল।
পেরিলা লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারের একটি ফসল। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া তথা দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে।
দীর্ঘ দিন গবেষণা করে পেরিলাকে দেশীয় আবহাওয়ায় অভিযোজন করাতে সক্ষম হয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) এক দল গবেষক। ইতোমধ্যে সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) নামে নতুন জাতটির নিবন্ধন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।
পেরিলার ৩টি জাতের মধ্যে বাংলাদেশে কোরিয়ান পেরিলা নিয়ে শেকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম তারিক হোসেনের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেছেন কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন শেকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন।
গবেষক দলের প্রধান ড. তারিক হোসেন বলেন, আমি ২০০৭ সালে পেরিলা নিয়ে শেকৃবিতে অল্প পরিসরে গবেষণা শুরু করেছিলাম। কোন সময়ে ভালো হয় দেখার জন্য বছরব্যাপী বিভিন্ন সময়ে পেরিলা চাষ করেছি। ২০১৮ সালে আমার তত্ত্বাবধানে পেরিলা নিয়ে আবার গবেষণা শুরু করেন কাইয়ুম মজুমদার। চাষের উপযুক্ত সময়, কম খরচে তেল নিষ্কাশন, তেলের গুণাগুণ নিয়ে দুই বছর গবেষণার পর আমরা সফলতা পাই।
সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে।
ড. তারিক হোসেন বলেন, পেরিলা অত্যন্ত উপকারী ভোজ্য তেল। এতে শতকরা ৫০-৬৫ ভাগ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এটি চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আবদুল কাইয়ুম মজুমদার বলেন, জুলাই এর মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর এ পর্যন্ত এ ফসল চাষ উপযোগী। প্রথমে চারা তৈরিতে চার সপ্তাহ সময় লাগে। চারা লাগানোর ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। ফলে বছর জুড়ে একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করা যায়। চাষে খরচ অনেক কম। খরিপ-২ মৌসুমে চাষ হওয়ায় আলাদা সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে একটানা বৃষ্টি না হলে ১০-১৫ দিন পর হালকা সেচ দিলেই হয়। হেক্টর প্রতি প্রায় দেড় টন ফলন পাওয়া যায়। এর পাতা ও ফুল মাটিতে পচে জৈব সারের যোগান দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের দেশীয় যন্ত্রের (ঘাণী) মাধ্যমে পেরিলা বীজ থেকে প্রায় ৪০-৪২ শতাংশ তেল বের করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে বীজ থেকে কৃষকরা সহজেই তেল বের করতে পারবে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা সরকারের অতিরিক্ত কোন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। আমার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের অর্থ আমি এ গবেষণায় ব্যয় করেছি।
ড. তারিক হোসেন রোগবালাই সম্পর্কে বলেন, রোগের পরিমাণ খুবই কম। আমরা কোন রোগ পাইনি। মাঝে মাঝে কিছু ক্যাটারপিলার (শুয়োপোকা) দেখা গিয়েছিল। বালাইনাশক স্প্রে করার পর আর আক্রমণ হয়নি। পেরিলা সব ধরনের মাটিতে চাষ করা য়ায়। লবণাক্ততাও সহ্য করতে পারে। সব পাতা হলুদ হয়ে গেলে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। এ সময় ক্যাপসুল (বীজের আবরণ) সবুজ থাকে। আমরা সারাদেশে এ ফসল ছড়িয়ে দিতে চাই। সরকারি সহযোগিতা পেলে আামরা গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। বাণিজ্যিকভাবে পেরিলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিলে ভোজ্য তেলে বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!

থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি....?

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার