একজন সফল উদ্যোক্তা



 তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলের ছাত্র ছিলেন রিফাত এম হক। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তখন ভাবতেন স্নাতক হলেই বুঝি মোটা অঙ্কের চাকরি পাওয়া যাবে। ২০১২ সালে স্নাতক হওয়ার পর প্রায় ৩৬১টি চাকরির সাক্ষাৎকার দেন রিফাত। কোনো জায়গায় কাজের ওপর বেতন আবার কোনো জাগায় একদমই কম বেতন, কোথাও আবার প্রকৌশলবিদ্যা পড়ে বিক্রয়ের কাজ—অনেক জায়গায় তো চাকরিই হয়নি রিফাতের।
প্রায় এক বছর ধরে চাকরির বাজারটা বোঝার চেষ্টা করেন রিফাত। সবশেষে ৫ হাজার টাকা বেতনে রিফাতের কর্মজীবন শুরু হয়। সে সময় রিফাতের পাশে ছিলেন স্ত্রী জেসমিন। তাঁদের এখন একটি মেয়েও আছে, নাম ফালাক। যেহেতু রিফাতের পড়াশোনার সঙ্গে চাকরির ক্ষেত্রের কোনো মিল ছিল না, তাই দেড় বছরের মধ্যে একে একে তিনটা চাকরি ছেড়ে দেন।



চাকরি ছাড়ার পর ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা বেশি করে করেন রিফাত। এমনও সময় ছিল তখন, যখন বড় বড় দোকানে, রেস্তোরাঁয় বা করপোরেট অফিসে গিয়ে রিফাত বলতেন, কারও ওয়েবসাইট ডিজাইন করে দিতে হবে নাকি। অনেকে বলতেন লাগবে, আবার অনেকে বলতেন এসব ভুয়া জিনিস নিয়ে আসবেন না। কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ওয়েবসাইট কতটা জরুরি, তা বোঝানোর চেষ্টা করতেন রিফাত। কখনো বাসে, কখনো হেঁটে মহাখালী থেকে পল্টনের বাসার দিকে ক্লান্ত হয়ে ফিরতে হতো রিফাতকে। নিজের কাজগুলোকে কীভাবে সবার সঙ্গে শেয়ার করবেন, সেই সুযোগ খুঁজতেন সব সময়।


‘সুযোগটা আসে ২০১৫ সালে ডেনমার্কভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে মেন্টর হওয়ার মাধ্যমে। সেখানে থাকার সময় ৩ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীকে ওয়েব এবং গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখাই।’ বললেন রিফাত। ২০১৭ সালে রিফাত নিজেও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। প্রতিদিন রাত জেগে বিভিন্ন দেশের কাজদাতাদের সঙ্গে কাজ করতে হতো রিফাতকে। ৫ ডলার পারিশ্রমিক দিয়ে শুরু, এরপর সর্বোচ্চ ৩৫০০ ডলার পর্যন্ত পারিশ্রমিকে কাজ করেন রিফাত। বর্তমানে ফাইভারে টপরেটেড ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন রিফাত।


ফ্রিল্যান্সিং করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ঠিক তখন থেকেই বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখেন রিফাত। তাঁরা ১১ জন। একই দিনে ১১ জন মিলে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করে তাঁদের প্রথম স্টার্টআপ ‘শিখবে সবাই’। রিফাত বলেন, ‘শিখবে সবাইয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দেশে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ আমাদের কোর্স অনলাইনে এবং সরাসরি ক্লাসের মাধ্যমে করতে পারবেন।’
প্রথম দিকে রিফাতদের কোনো অফিস ছিল না। ১১ জন যে বেতন পেয়েছিলেন চাকরির শেষ মাসে, তার পুরোটাই বিনিয়োগ করেন নতুন উদ্যোগে সবাই। রিফাত বলেন, ‘প্রথম মাসেই অনলাইন ক্লাসে ভর্তি হন ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে পেয়ে যাই এলআইসিটি ও এলইডিপির মতো সরকারি প্রকল্প। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বনানী ৭ নম্বর সড়কে ৪ হাজার বর্গফুটের অফিস নিই আমরা। মিরপুরে আরও একটি স্মার্ট ক্যাম্পাস রয়েছে।

শিখবে সবাইয়ের বয়স ২ বছর ৩ মাস। আর এরই মধ্যে ৪ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে রিফাতের প্রতিষ্ঠানে। যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করে আজকে নিজ নিজ স্থানে প্রতিষ্ঠিত। শুরু করেছিলেন ১১ জন নিয়ে আর এখন শিখবে সবাই পরিবারে ৩০ জনের মতো সদস্য।


এরই মধ্যে বিগত মে মাসে রিফাত শুরু করেছেন শিক্ষকদের জন্য প্রথম ‘অনলাইন টিচিং মার্কেটপ্লেস’, যার নাম হচ্ছে ‘ইন্সট্রাক্টরি’। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষকেরা খুব সহজেই তাঁদের কোর্স আদান-প্রদান করে আয় করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দের কোর্সটি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে শিখতে পারবেন।রিফাতের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শিখবে সবাই ও ইন্সট্রাক্টরির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। রিফাত মনে করেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে প্রতিনিয়ত শিখতে হবে, নিজের মেধাকে আরেকজনের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ফেনীর সন্তান রিফাত এম হক বড় হয়েছেন রাজধানীতে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রিফাত । বাবা খোন্দকার মোজাম্মেল হক ‘গেদুচাচার খোলা চিঠি’খ্যাত কলামিস্ট ও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক। মা ফারজানা নূর গৃহিণী।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!

থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি....?

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার