সোনা পাতার ঔষধী গুনা গুন...
প্রচিন কালথেকে বা যুগ যুগ থেকে অায়ুবেদ, ইউনানি বা কবিরাজি ও বনজ ঔষধ বাংলা নাম সোনা পাতা।
ইংরেজী নাম: Senna, Tinnevelly Senna বৈজ্ঞানিক নাম: Cassia angustifolia Vahl.পরিবার: Caesalpiniaceae
আরবি নাম: সোনামাক্কী
ব্যবহার্য অংশ: পাতা, ফুল ও ফল। মুলত পাতার ব্যবহারই বেশী।
পরিচিতি:
উভয় পাশে পাতা থাকে। পাতা দেখতে অনেকটা মেহেদী পাতার মত। পাতার রং কাঁচা অবস্থায় হলুদাভ সবুজ এবং শুকনো হলে হলুদাভ সোনালী বর্ণ হয়ে থাকে। শেষ প্রান্তে অর্থাৎ মাথায় হলুদ রঙের ফুল ফোঁটে। ফুল সাদা বা গোলাপী রঙেরও হয়। ফল শিম জাতীয় নলাকার বা চ্যাপ্টা হয়। ফলের ভিতরে আড়াআড়িভাবে বীজ থাকে।
প্রাপ্তিস্থান:
সুদান, সোমালিয়া, সিন্ধুপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও দক্ষিণ ভারতে বাণিজ্যিক ভবে সোনা পাতার চাষ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে সহ ভারত উপমাহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সোনাপাতা বেশ দেখা যায়। আরব দেশের জঙ্গলে সোনাপাতা প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে।
রাসায়নিক উপাদান সোনা পাতায় আছে ১.৫-৩% হাইড্রোজায়ানথ্রাসিন গ্লাইকোসাইড, প্রধানত সেনোসাইড এ এবং বি যা রেইন-হায়ানথ্রোন এবং কম পরিমাণে সেনোসাইড সি এবং ডি যা রেইন-এলো-ইমোডিন-হেটেরোডায়ানথ্রোন, ন্যাপথলিন গ্লাইকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েড
(কেম্পফেরল এবং আইসো-রামানিটিন এর ডেরিভেটিভ), ১০-১২% খনিজ উপাদান , ৭-১০% মিউসিলেজ (গ্যালাক্টোজ, এরাবিনোজ, রামনোজ এবং গ্যালাকটিউরোনিক এসিড) , প্রায় ৮% পলিঅল (পিনিটল); সুগার(গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ) এবং রেজিন। ঔষধী ব্যবহার্য সোনা পাতায় বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলির কারণে এটা প্রধানত জোলাপ বা রেচক হিসেবে বেশী ব্যবহৃত হয়। কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করতে চমৎকার কাজ করে। সোনা পাতায় বিদ্যমান এনথ্রানয়েড রেচক হিসেবে উদ্দীপনা যোগায় এর কারণ হল সেনোসাইড এবং রেইন এনথ্রোন হজম প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। রেচক (Laxative effect) বা শীতলকারক হওয়ার ফলে বৃহদন্তে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় যা ইনটেস্টাইন্যাল উপাদান গুলোর ভলিউম এবং চাপ বৃদ্ধি করে। এতে কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপিত হয়। ফলে খুব অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই মল দেহ থেকে বাইরে নিষ্কাষিত হয়ে থাকে।
কমিশন ই(E) কোষ্ট-কাঠিন্য থেকে মুক্তি বা নিরাময়ের জন্য সোনাপাতা গ্রহণের অনুমতি দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মাঝে মধ্যে সংঘটিত কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করার জন্য স্বল্প সময়ের চিকিৎসা হিসেবে সোনাপাতা ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
এছাড়া পায়ু পথের সমর্সা দূর করতে, অর্শের সমস্যায়, অপারেশনের পূর্বে ও পরে পেট পরিষ্কার রাখতে সোনাপাতা ব্যবহার করা হয়।
সোনাপাতায় বিদ্যমান ইমোডিন বিভিন্ন পরিমাণে চিকিৎসায় ব্যবহা করা হয়। প্রদাহ নাশ করতে ১৫ মি.গ্রা./ কেজি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এন্টি সেপটিক ও এন্টি আলসার হিসেবেও এটা কাজ করে।
এন্হ্রাকুইনোন সাইটোটক্সিক এবং কোষ পুনরুদ্ধার-এ রিজেনারেশনে উদ্দীপনা জাগায়, ডিটক্সিফিকেশন এবং পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে।
সোনাপাতার নানা বিধ ব্যবহারের মথ্যে রয়েছে-ক্ষুধা কমায়, যকৃত বিকৃতি, প্লীহা বিকৃতি, বদহজম, ম্যালেরিয়া তকের বিভিন্ন সমর্সা জন্ডিস এবং এনিমিয়।
ইসলামে সোনাপাতা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে- হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করেন, “ আপনি জুলাবের জন্য কি ব্যবাহা করেন? তখান হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি শিবরমের নাম বলেন। তখন হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন “এটাতে খুবই গরম” অতএব হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, “আমি সেনা দ্বারা জুলাব নেই।“ তখন হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন, “ যদি কোন জিনিসের দ্বারা মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যেত, তবে তা সেনাপাতা দ্বারা পাওয়া যেত।“
অতঃপর হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন উনি এরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা অবশ্যই সেনা ব্যবহার করবে, কেননা এটা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শেফাদানকারী মহা-ঔষধ।" সতর্কতা: আলসার, এপেনহিসাইটিস ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে সোনাপাতা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এবং ৫ বছরের নিচের বাচ্চদের এই হার্বস ব্যবহার করা উচিত নয়।
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া:
উচ্চ মাত্রায় দীর্ঘদিন ধরে সোনা পাতা ব্যবহার করলে শরীরে পটাশিয়াম লেভেল কমে যায়। পটাশিয়াম লেভেল কমে গেলে এই অবস্থাকে বলে হাইপোক্যালিমিয়া। হাইপোক্যালমিয়া হলে নিম্নলিকিত লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে-
১!পেটে ব্যথা
২!কোষ্ট-কাঠিন্য
৩!লো ব্লাড প্রেশার
৪!গোস্ত পেশীর দূর্বলতা
৫!বমি বমি ভাব
৬!বমি হওয়া
৭!দৃষ্টি ভ্রম
৮!শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটে
৯!হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন দেখ দেয়
দীর্ঘ সময় ধরে সোনা পাতা ব্যবহার করলে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, হাড় বা গোস্তপেশী দূর্বল হয়ে পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন