হাঁপানি কি.....? এর চিকিৎসা কি...?


শ্বাসকষ্ট মানেই কিন্তু অ্যাজমা নয়। অ্যাজমা ছাড়াও আরও নানান কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যেমন- হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যাদের রক্তশূন্যতা আছে, তাদের হতে পারে এছাড়াও কিডনি রোগের ক্ষেত্রেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ্যাজমা বা হাঁপানি নিয়ে ভুলধারনা প্রচলিত অাছে মনে রাখুন যে ধুলা কিন্ত হাঁপানির কারণ নয়। যদি কারণই হবে, তাহলে সব মানুষের ধুলা তে শ্বসকষ্ট হচ্ছে না কেন? এর থেকে বুঝা গেলো ধুলা হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালীর ভিতর লুকিয়ে থাকা রোগকে প্রকাশ করে মাত্র। কারণ হিসাবে উত্তেজক বা ট্রিগার ফ্যাক্টরগুলিকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উত্তেজকের উপর নির্ভর কারে হাঁপানি বা এ্যাজমা সাধারণত নিম্ন ধরনের- * এ্যালার্জির কারনে এ্যাজমা। * ভাইরাস সংক্রমণের কারনে এ্যাজমা। * ব্যায়ামের কারণে এ্যাজমা। * পেশাগত কারণে এ্যাজমা। * আবহাওয়ার কারণে এ্যাজমা। * ঔষধের কারনে এ্যাজমা। * মানসিক চাপ-এর কারণে এ্যাজমা। এ্যালার্জির কারনে এ্যাজমাঃ এই ধরনের এ্যাজমা সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই এ্যাজমা সাধারণত অল্প বয়সে শুরুহয় এবং বংশানুক্রমে চলতে থাকে। এই ধরনের রোগীদের অন্যান্য এ্যালার্জি একসাথে থাকতে পারে, যেমন- একজিমা ইত্যাদি। হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। সঠিক চিকিৎসা এবং ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেসব উত্তেজকের (ট্রিগার) কারণে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে যায়, রোগীকে সেগুলো শনাক্ত এবং পরিহার করতে হবে। হাঁপানির চিকিৎসা, এ ছাড়া সব হাঁপানি রোগীকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে: ধূমপান এবং তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। ঠান্ডা বাতাস হাঁপানির তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। এ সময় ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়। ব্যায়াম শরীর ভালো রাখে এবং উচ্চরক্তচাপ ও অন্যান্য জটিল রোগবালাই থেকে শরীরকে রক্ষা করে। সঠিক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যায়ামের সময় বা পরে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পরিহার করা সম্ভব। বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং বাড়িতে অবাধ বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ওষুধ :- দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন: হাঁপানি প্রতিরোধক হাঁপানি উপশমকারক হাঁপানি প্রতিরোধক :- যেসব ওষুধের ব্যবহার হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করে, সেগুলোকে হাঁপানি প্রতিরোধক বলা হয়। দুই ধরনের ওষুধ হাঁপানি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে: এন্টি ইনফ্লামেটরি ওষুধসমূহ: এসব ওষুধ শ্বাসনালির প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হাঁপানি প্রতিরোধ করে। এই শ্রেণীর বহুল ব্যবহূত বুসোনাইড, ক্লোমিথাসেন, ফ্লুটিকাসোন ইত্যাদি। ব্রঙ্কোডাইলেটর বা শ্বাসনালি প্রসারক: এসব ওষুধ দ্রুত শ্বাসনালিকে প্রসারিত করে হাঁপানির তীব্রতা প্রতিরোধ করে। হাঁপানি উপশমকারক :- ব্রঙ্কোডাইলেটরসমূহ উপশমকারক হিসেবে কাজ করে। ব্রঙ্কোডাইলেটরসমূহ শ্বাসনালিকে দ্রুত প্রসারিত করে। ফলে ফুসফুসে সহজে বায়ু চলাচল করতে পারে এবং এর মাধ্যমে হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গসমূহ দ্রুত উপশম হয়। দুই ধরনের ব্রঙ্কোডাইলেটর বা শ্বাসনালি প্রসারক আছে, যেমন: ক্ষণস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর—যেমন: সালবিউটামল। এসব ওষুধ দিনে তিন-চারবার ব্যবহার করতে হয়। দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর—যেমন: ব্যামবিউটামল। এসব ওষুধ দিনে একবার ব্যবহার করতে হয়। মৃদু বা মাঝারি হাঁপানিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষণস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর (যেমন: সালবিউটামল) ব্যবহার করলে কোনো ধরনের ক্লিনিক্যাল সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর (যেমন: ব্যামবিউটামল) ব্যবহার করতে হবে। রাত্রিকালীন হাঁপানিতে মোডিফাইড রিলিজড থিওফাইলিনের বিকল্প হিসেবে ব্যামবিউটামল ব্যবহার করে ভালো সুফল পাওয়া যায়। হাঁপানির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :- অনেক রোগীই হাঁপানি চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলে, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানি আরও ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ না করলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং অকেজো হবে। শিশুদের হাঁপানির ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মায়েদের বেলায় গর্ভস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। হাঁপানি চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :- করটিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার ওরাল ক্যানডিয়াসিস সৃষ্টি করতে পারে। যেসব রোগী ইনহেলারের মাধ্যমে করটিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করে, তাদের অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট (যেমন: অসটোক্যাল/ অসটোক্যাল জেধার) গ্রহণ করা উচিত। চিকিৎসার তিনটি প্রধান উপায় : ১. এলাজেন পরিহার : হাঁপানির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো যে জিনিসে এলার্জি তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই এজমা রোগীদের প্রথমেই এলার্জি টেস্ট করে জানা দরকার তার কিসে কিসে এলার্জি হয়। ২. ওষুধপত্র : নানা ধরনের হাঁপানির ওষুধ আছে। প্রয়োজন মতো ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন। সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ক) শ্বাসনালির সঙ্কোচন বন্ধ করতে ওষুধ ব্যবহার করা, যেমন ব্রঙ্কোডাইলেটর, নালবিউটামল, থিউফাইলিন, ব্যামবুটারল খ) প্রদাহ নিরাময়ের ওষুধ, যেমন কার্টিকোস্টেরয়েড (বেকলোমেথাসন, ট্রাইএমসিনোলোন, ফ্লোটিকাসন) এগুলো ইনহেলার, রোটাহেলার, একুহেলার ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং লিউকোট্রাইন নিয়ন্ত্রক মন্টিলুকাস্ট , জেফিরলুকাস্ট ব্যবহার করা। ৩. এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : এলার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন ও এজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহার কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থও এ ভ্যাকসিন পদ্ধতি চিকিৎসাকে এজমার অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করে। এটাই এজমা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। বর্তমানে বাংলাদেশেও এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়। আগে ধারণা ছিল এজমা একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথমদিকে ধরা পড়লে এলার্জিজনিত এজমা রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। অপচিকিৎসা নিয়ে মৃত্যুবরণ কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় করে বিদেশে যাওয়ার কোন দরকার নেই। ডাঃ শাহজাদা সেলিম ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ বাারডেম, ঢাকা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অাগরা শাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর .....!

Mia Khalifa মিয়া খলিফা sex সমাচার

থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি....?